একটি ফুটফুটে ছেলের বাবা হলেন রওশান সাহেব
রওশান সাহেব পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, বাসা বসুন্ধরায়।
বয়স ৩৭ বছর, উচ্চতা ৫.৬ ইঞ্চি, ওজন ৯২ এর আশেপাশে।
খুব সৌখিন, আরামপ্রিয় মানুষ, কিন্তু এই আরামই যে তার সর্বনাশ করছে তা উনি বুঝতেই পারেন নি।
২০১৪ তে বিয়ের পর থেকেই ধীরে ধীরে একের পর এক ডিনারের দাওয়াতে গিয়ে আর প্রচুর সফট ড্রিংক্স-ডেজার্টস খেয়ে তার ওজন বাড়তে শুরু করে। আহ্লাদ করে স্ত্রী তার খাওয়া নিয়ে কিছু বলতেন না, আর অফিস-ফ্যামিলি টাইম দিয়ে দিয়ে নিজের যত্ন নেয়ার কোন সময়ও তার থাকতো না।
২০১৭ সালে রওশান সাহেব লক্ষ করলেন, চেষ্টা সত্ত্বেও তার স্ত্রী গর্ভধারন করছেন না। প্রায় দুই বছর চেষ্টার পরেও যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না, তখন ওনার সিমেন এনালাইসিস করে দেখা গেল, ৭০% সিমেনের হেড ডিফেক্টস, স্পার্ম কাউন্ট ২ মিলিয়ন মাত্র। সাথে আছে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা। হঠাত যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন তিনি। প্রথমে গেলেন দেশসেরা কয়েকজন ইনফার্টিলিটি এক্সপার্টের কাছে, তাতেও কাজ না হওয়ায় ২০১৯ সালে গেলেন চেন্নাইয়ে। তাদের ওষুধে স্পার্ম কাউন্ট বেড়ে হল ২২ মিলিয়ন, এরপর তার স্ত্রী গর্ভধারন করলেও মিসক্যারেজ হয়ে গেল, মূলত ভ্রুনের হার্টবিট আসে নি। এরপর হতাশায় ট্রিটমেন্ট বন্ধ থাকে কিছুদিন, স্পার্ম কাউন্ট নেমে দাঁড়ায় মাত্র ৩ মিলিয়নে!!
রওশান সাহেব তখন আমাকে দেখাতে এলেন গত বছরের জানুয়ারীতে।
ছয় মাস ১৬ঃ৮ ও ১৮ঃ৬ ঘন্টা ফাস্টিং করার পর ওনার ওজন এখন ৭১। এরমধ্যে একবারও তিনি ফলো আপ মিস করেন নি।
আমার তত্ত্বাবধানে থাকার সময় তিনি বাসায় প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার, ধুমপান এবং মিষ্টি খাবার একেবারে ছেড়ে দেন, সাথে ছেড়ে দেন গমের তৈরি খাবার, সয়াবিন তেল ও বাসার বাইরের সব নাস্তা।
গত নভেম্বর মাসে রওশান সাহেবের স্পার্ম কাউন্ট ৫৫ মিলিয়ন হয়েছে এবং এক্টিভ মোটাইল স্পার্ম বেড়ে ৫৫% হয়েছে। হেড ডিফেক্টস কমে ১০% এ নেমেছে।
গতকাল মেসেঞ্জারে নক দিয়ে রওশান সাহেব আমাকে জানালেন এ সপ্তাহেই তিনি একটি ফুটফুটে ছেলের বাবা হয়েছেন।
আমি যেন টেক্সট মেসেজ পড়েই মানুষটাকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম, সেই বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠ, সেই হতাশায় ঢাকা মায়া মায়া চেহারা, সেখান থেকে টানা বছরের পর বছর লড়াই করে ফিরে আসা!!
এটাই তো জীবন!!