জয়নাল সাহেবের আন্তরিক চেষ্টা এবং ওবেসিটি ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠার সাকসেস স্টোরি
৩২ বছর বয়সী জয়নাল সাহেব সবসময়ই ৯০/৯২ কেজি ওজনের আশেপাশে ছিলেন। কোভিডে আক্রান্ত হবার পর ২০২৩ এর অক্টোবর পর্যন্ত গত দু’বছরে তার প্রায় ১৫ কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছিলো। এছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের পাশাপাশি কোমর ব্যাথা, বেশিক্ষণ হাঁটতে না পারা, হাঁটতে গিয়ে খুব অল্পতেই হাপিয়ে যাওয়া – এই সমস্যাগুলো ফেইস করতে থাকেন।
গত অক্টোবরের ৩১ তারিখ জয়নাল সাহেব চেম্বারে আসলেন ১১২ কেজি ওজন নিয়ে। প্রাইমারি অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে উনাকে কিছু টেস্ট সাজেস্ট করা হলো। রিপোর্টে দেখা গেল, তীব্র ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, লিপিড প্রোফাইল খুবই খারাপ, হাইপোথাইরয়েড, ভিটামিন ডি ও টেস্টোস্টেরনের স্বল্পতা, হাইপারটেনশন (ডায়াস্টলিক)সহ আরো অনেকগুলো মেটাবলিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি। জয়নাল সাহেবের মাথায় হাত! “এখানে এসে শুনলাম আমার এতো সমস্যা, না আসলে তো কোনদিন জানতেও পারতাম না”।
ডায়েট প্ল্যান দিয়ে টার্গেট সেট করে দিলাম, একবছরে ৪৫ কেজি ওজন কমানোর প্ল্যান। ২০-২৫ কেজির বেশি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাধারনত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন একটা প্ল্যানে কাজ হয় না, ধাপে ধাপে কমিয়ে আনতে হয়।
পরের মাসে ১০৪ কেজি ওজন নিয়ে আসলেন চেম্বারে। জয়নাল সাহেব জানালেন, ডায়েট প্ল্যান ফলো করার ১ সপ্তাহেই ৪ কেজি ওজন কমে যায়। দ্বিতীয় দফায় জয়নাল সাহেবকে ইন্টার্মিটেন্ট ফাস্টিং প্ল্যান দেয়া হয় যেখানে সারাদিনে দু’বেলা খাবেন, বাকি সময় ফাষ্টিং পিরিয়ড চলবে।
দেড় মাস পর হাসিমুখে জয়নাল সাহেব ফলো আপ এর জন্য আসলেন। ওজন এবার ৯৫ কেজি। চোখে মুখে স্বস্তির নিঃশ্বাস, কারণ ওজন অনেক কমেছে যেটা আশানুরূপ। বর্তমান ক্লিনিক্যাল কন্ডিশন ও টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, ওনার টেস্টোস্টেরন লেভেল ভালো ইমপ্রুভ করেছে, , আগে উনার severe ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ছিল, যা এখন আগের তুলনায় কমে ৪ ভাগের ১ ভাগ হয়েছে । জয়েন্টে ব্যাথা আছে কিনা জানতে চাইলাম, বললেন আগের থেকে খুবই কম। লিপিড প্রোফাইল এখনও কিছুটা ইমপ্রুভ করতে হবে। থাইরয়েড লেভেল অনেকটা নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছে।
আসলে ওনার দ্রুত উন্নতির আসল কারণ হচ্ছে উনি সত্যিই সুস্থ হতে চেয়েছিলেন। তাই উনাকে যখন ডায়েট প্ল্যান দেয়া হয়, তখন থেকেই তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার থেকে শুরু করে এক্সারসাইজ ও সকল পরামর্শ স্ট্রিক্টলি মেইনটেইন করেছেন।
আমরা আশা করছি এক বছর না, আগামী ৪ মাসেই বাকী আরো ২৫ কেজি সহ মোট ৭ মাসে ৪৫ কেজি ওজন কমিয়ে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স রিভার্স করে, কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশান, হাইপোথাইরয়েডিজম ও লো টেস্টোস্টেরন লেভেলের সমস্যা থেকে সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যাবেন জয়নাল সাহেব।
এই ভদ্রলোকের প্রতি আমার ভাল লাগার একটা অন্যতম কারন হলো, তিনি আমাকে কখনো ওজন কমাতে তাড়া না দিয়ে বরঞ্চ নিজের ওপর কড়াকড়ি করেছেন, আমার ওপর সম্পুর্ন আস্থা রেখেছেন।
সবার ওজন একভাবে কমে না। কারো কারো খুব ভাল ডিসিপ্লিনে থাকার পরেও সময় লাগে বংশগত, মানসিক ও বিভিন্ন হরমোনাল কারনে।
সবার আগে তাই প্রয়োজন ঠিকভাবে গোল সেট করা এবং মাথা ঠান্ডা রেখে প্রতিটা স্টেপে ঠিকভাবে পা রাখা।
সাফল্য আসবেই, ইনশা আল্লাহ।