“পরিবর্তনের পথে, পরিবর্তনের জন্য”
বয়সঃ ২১
৪মাস পূর্বের ওজনঃ ১১০
৪মাস পরের ওজনঃ ৭৯
উচ্চতাঃ ৫’ ৭”
“কিরে মোটু?, “বন্ধু তুই তো দিন দিন আলুর বস্তা হয়ে যাচ্ছিস”“আর কত ভুড়ি বাড়াবা বন্ধু?” “দোস্ত এটা তোর ভুড়ি তো না যেন ময়দার বস্তা” “তোর শেপ তো বেসাইজ হয়ে যাচ্ছে”
এমন অনেক অনেক উক্তি, কথা শুনে শুনে একটা সময় অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। তবুও মনকে তখন সান্ত্বনা দিতাম এই ভেবে যে, “পৃথিবীতে আছিই আর কত দিন? আরামছে খেয়ে দেয়ে মরি নাইলে তো আফসোস করবো” এই একটা চিন্তাই আমাকে দিন দিন মোটা করে তুলছিল। ওজন বাড়ছিল প্রতিনিয়ত। অনিয়ন্ত্রিত খাবার, লাইফস্টাইল, দিন দিন আমাকে অসুস্থ করে তুলছিল।
আমার পূর্বের জীবনের ভাত, সাথে আলু ভর্তা, ডাল,ডিম ভাজা, কি অসাধারণ অনুভূতি কাজ করতো এগুলো খাওয়ার সময় তা বলে বোঝানো যাবে না। দৈনিক ২-৩ বেলা ভাত খাইতাম, দেড় থেকে দুই প্লেট করে। আর মিষ্টি জাতীয় সব কিছু ছিল আমার খুব প্রিয়। আমি নিজেই রান্না করতে পছন্দ করি, তাই বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টাল ডিস রান্না করে করে খাইতাম।
আমার তখন ওজন ১১০ কেজি, কোমড় ছিল ৪৬। শরীরের গঠন অনেকটা ছোটখাটো হাতির মতন।😓 অনেকের ফিজিক্যাল ট্রান্সফর্মেশন এর ভিডিও দেখতাম আর ইন্সপায়ার হতাম। কিন্তু ডায়েটের ইচ্ছা জাগতো না। ডায়েট মানেই তো জীবনের সবচেয়ে মজার খাবার গুলোকে বাদ দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু অন্য দিকেও সমস্যা, এই শরীর তখন কন্ট্রোল এর বাইরে চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু একটা সময় এসে বুঝতে পারি এবার এগুলো বন্ধ করতে হবে, সুস্থ জীবন শুরু করতে হবে। নতুন একটা শুরু খুব দরকার আমার। আমার এই অতিরিক্ত ওজন আমার সকল কিছুতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সেটা শারীরিক ভাবেই বলেন বা মানসিক। পড়াশুনায় মনযোগ নষ্ট হতে শুরু হলো। আমিও ভেঙে পড়ছিলাম।
কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে কিছুই করতে পারতেছিলাম না।
হঠাৎ করে জানতে পারলাম, আমাদের সজল ভাই সুস্থ লাইফস্টাইল জন্য কাজ করছেন,ভাই কে সানজাক ই ওসমান পড়ার পর থেকে চিনি বা জানি।ভাইয়ের সাথে এই গ্রুপে কাজ শুরু করলাম,হঠাৎ একদিন মনে করলাম,ভাইকে আমার সমস্যার কথা জানানো দরকার।
ভাইকে একদিন ফেসবুকে নক করে জানালাম সমস্যার কথা,উনি বললেন উনার চেম্বারে কথা বলে একটা এপয়েন্টমেন্ট নিতে,তারপর অনলাইনে উনাকে আমার সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জানালাম, ভাই আমাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে বললেন দুইমাস কিটো করতে, এবং ফলাফল জানাতে বললেন।
একমাস কিটো করার পর দেখি মাত্র পাচঁ কেজি কমেছি, মনোবল হারালাম না,ভাইয়ের দিকনির্দেশনা মেনে চলতে লাগলাম,দুইমাস পরে দেখলাম ১২কেজি কমে গেছি,খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম।তখন পাশাপাশি জিমে জয়েন করলাম।
যখনই মনোবল হারাতাম,তখনই একদিন নিজেকে সময় দিয়ে আবার শুরু করতাম।কিটো শুরু করার পর যতবার কাচ্চি খেতে গিয়ে ফিরে এসেছি, তার হিসেব নাই।
প্রতেক পনের দিন পর ওজন মাপতাম,না কমলে মনোবল হারাতাম না,আবার শুরু করতাম,সজল ভাইয়ের বিভিন্ন পোষ্ট পড়ে নিজেকে সান্তনা দিতাম।এভাবেই কবে চারমাস শেষ করে ফেলেছি তার হিসেব করে আর পাই নাই।
বর্তমানে আমার ওজন মাত্র ৭৯কেজি।
কোমর ৪৬ থেকে কমে আসলো ৩৭ এ।
১১০ কেজির ছোটখাটো হাতি থেকে, আজ আমি ৭৯ কেজির সুবোধ বালক।
এখন চলাফেরায় যে কতটা আরাম তা বলে বোঝানো যাবে না। আমার ভিতরে অনেক কনফিডেন্স বেড়ে গেছে। নিজেকে দেখতে সুন্দর লাগে নিজের কাছেই। এখন পরিচিত মানুষ গুলো আমাকে দেখলে তাকিয়ে থাকে, চেনার চেষ্টা করে, এটা আসলে কে? এটা কি সেই ওমর? এটা কি সেই ছেলে? তাদের সেই অবাক দৃষ্টি আমাকে খুব আনন্দ দেয়।
এটাই ছিল আমার পরিবর্তনের গল্প। ❤
#ফিরেআসারগল্প
লিখেছেনঃ ওমর ফারুক