Top

প্যাশেন্টস ডায়েরি: পর্ব – ১

Sajal’s Diet Falsafa / Patient Diary  / প্যাশেন্টস ডায়েরি: পর্ব – ১

প্যাশেন্টস ডায়েরি: পর্ব – ১

মিসেস নাহারের (ছদ্মনাম) বয়স যখন ২৪ তখন তিনি প্রথম মা হন, দ্বিতীয়বার মা হলেন ২৭ বছর বয়সে। দ্বিতীয়বার মা হওয়ার পর থেকে তার কিছুটা বিষণ্ণতা (পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন) ও ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। প্রেগন্যান্সির পর তার উচ্চতা ছিল ৫.১ ফুট, ওজন ছিল ৫৪ কেজি। ৫ বছর পর একদিন হঠাৎ তিনি আবিষ্কার করলেন তার ওজন ৭২ কেজি হয়ে গেছে। এসময় তার স্বামী ব্যাপারটায় খুব একটা গুরুত্ব দেন নি। স্ত্রীকে ভালোবেসে যখন যা খেতে চেয়েছেন এনে দিয়েছেন। এসময় তারা কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল ব্যবহার করেন তিন বছর।

৭২ কেজি ওজন হবার পর তিনি তৃতীয়বার গর্ভবতী হন, এবারে প্রেগন্যান্সি শেষে ওজন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৯০ কেজিতে চলে যায়। শেষদিকে দেখা দেয় জেস্টেশনাল ডায়বেটিস।

তৃতীয় সন্তান প্রসবের পর ইমোশনাল ইটিং আরো বাড়ে, ওজন কমে ৮৫তে থাকে কিছুদিন, এরপর তা আবার বেড়ে ৯০তে পৌছায়। এই অবস্থা থেকে তিনি শুরু করেন স্ট্রিক্ট লো ক্যালরি (১০০০ কিলোক্যালরি) ডায়েট। দুই বেলা লাল আটার রুটি, একবেলা ভাত। সুগার খান না মোটেই। সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখেন, প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে হাটেন।

৬ মাস পর ওজন কমে ৮৪ কেজিতে আসে।

আরো ৬ মাস চলে যায় এরপর, কিন্তু ওজন আর কমে না। একটানা কম খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েন নাহার, এই পর্যায়ে এসে সারাদিনই তার ক্লান্ত লাগতে থাকে। ঘুম পাতলা হয়ে যায়, খাওয়ার পর হাত পা ঘাম দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়তে থাকেন তিনি।

ঢাকার একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর তার ডায়বেটিস ধরা পড়ে। HbA1C আসে ৭.৪।

ডাক্তার বলেন ওজন কমাতে, বারডেমের লো ক্যালরি-লো ফ্যাট ডায়েট চার্ট, সাথে মেটফরমিন এবং গ্লিপজাইড গ্রুপের ওষুধ দেয়া হয়।

কিন্তু দেখা গেল, ওনার রুচি কমছে না, কমছে না দুর্বলতাও।

হাটার পরিমান দ্বিগুন করেও লাভ হল না, ঘুমের জন্য ঘুমের ওষুধ কিছুদিন খেয়ে বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলেন।

তারপর এক কলিগের কথা শুনে এলেন আমার কাছে।

আমি সব বুঝে শুনে ওনাকে টাইম রেস্ট্রিক্টেড ইটিং দিলাম।

ওনার এই কেইসটার কয়েকটা টার্নিং পয়েন্ট নিয়ে কথা বলি, যে জায়গাটায় ব্যবস্থা নিলে হয়তো ওনার এই অবস্থা হত না।

১) ওনার যখন ইমোশনাল ইটিংয়ের অভ্যাস তৈরি হল, তখন থেকেই উনি সতর্ক হতে পারতেন

২) নাহারের উচিত ছিল পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনকে আরো সিরিয়াসলি নেয়া

৩) ওনার স্বামী যদি স্ত্রীর ওজন মনিটরিংয়ে আরো আগে সাবধান হতেন, তাহলে হয়তো তিনি ওজন বাড়ানোর ব্যাপারে আরো সচেতন থাকতেন

৪) লো ক্যালরি ডায়েট বেশিদিন করা যায় না, এবং একটা পর্যায়ের পর লো ক্যালরি ডায়েট আর কাজ করে না। ডায়বেটিক প্যাশেন্ট লো ক্যালরিতে আরো দুর্বল এবং আরো ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। তাই ডায়বেটিকদের ক্যালরি কাউন্টের চেয়ে কার্বোহাইড্রেট কাউন্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৫) দুই বেলা রুটি, একবেলা ভাত ওজন কমানোর কোন হেলদি সলিউশন না, এটার স্বপক্ষে থাকা প্রমানও সীমিত।

৬) প্রেগন্যান্সি টু প্রেগন্যান্সি বডি ট্রান্সফরমেশনের সুযোগ থাকে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে ওজন স্বাভাবিকে আনার চেষ্টা করা উচিত। বেশিরভাগ নারীরই প্রতি সন্তান প্রসবের পর প্রায় স্থায়ীভাবে ২-৩ কেজি ওজন বাড়ে, যা কমানোটা একটু কঠিন। এটুকু বাড়বেই। কিন্তু এর বাইরে যেটুকু রয়ে যায়, সেটা না কমালে স্থায়ী বিপদ সৃষ্টি অনিবার্য।

Share
admin