Top

প্যাশেন্টস ডায়েরি (পর্ব – ৩): রবিউল সাহেব যেভাবে তার ব্যবসা হারালেন

Sajal’s Diet Falsafa / Patient Diary  / প্যাশেন্টস ডায়েরি (পর্ব – ৩): রবিউল সাহেব যেভাবে তার ব্যবসা হারালেন

প্যাশেন্টস ডায়েরি (পর্ব – ৩): রবিউল সাহেব যেভাবে তার ব্যবসা হারালেন

রবিউল সাহেব ছিলেন নারায়নগঞ্জের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার মাসিক আয় ছিল প্রায় ২০ লাখ টাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল্য ছিল ১৫ কোটি টাকার বেশি। বাবা-মা, স্ত্রী, এক সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসার, বয়স মাত্র ৩৩ বছর, স্ত্রীর বয়স ২৫ বছর। ২০১৯ সালে রবিউলের ওজন ছিল ৭২ কেজি, উচ্চতা ৫.৭ ফুট, স্ত্রী আসিফার ওজন ৫৩ কেজি, উচ্চতা ৫.২ ফুট।

 

প্রথম সন্তান হওয়ার পরপরই তার স্ত্রী পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে পড়েন। নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মাসের পর মাস ধরে স্ত্রীর অদ্ভুত আচরন ও হতাশাকে তিনি বুঝতে পারেন নি। এর মধ্যে স্ত্রী ওয়েট গেইন করেন প্রায় ৭ কেজি। এরপর অতি শিগগিরই তার মুড সুইং শুরু হয়, মাসিক অনিয়মিত হতে থাকে। তিনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নরমেন্স খাওয়া শুরু করেন মাসিক স্বাভাবিকের জন্য। তাতে ওজন বাড়া থামে না। ডাক্তার ওজন কমাতে বলেন, কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ওজন, হতাশা আর মুড সুইং।

স্ত্রীর সেক্স ড্রাইভ রাতারাতি কমে তলানিতে ঠেকে। সেক্স করতে না পারার মানসিক ও শারীরিক চাপ ক্রমেই রবিউলের ওপর এক জগদ্দল পাথরের মত ভারী হয়ে ওঠে।

ক্রমেই, আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে শুরু করেন তিনি। এবার তারও শুরু হয় ওজন বাড়া। রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়, পর্ন দেখে মাস্টারবেট করতে শুরু করেন তিনি।

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন থেকে স্ত্রী সেরে ওঠার পর, ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে দেখা যায়, রবিউলের রক্তে এলডিএলের মান বেড়ে ১৮০ তে পৌছে গেছে, টিজি ৪৭০+। তার তখনকার ওজন ছিল ৮৪ কেজি। এই অবস্থায় রবিউল বুকে চাপ/ব্যথা অনুভব করা, উচ্চ রক্তচাপ, দম আটকে আসা জাতীয় উপসর্গ অনুভব করতে শুরু করেন।

রবিউলের আত্মবিশ্বাস নেমে যায় তলানিতে, কমে আসে যৌন সক্ষমতা। কিছুদিন পর দেখা দেয় ইরেক্টাইল ডিজফাংশান। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রচন্ড উদ্বিগ্নতায় ভুগতে শুরু করেন তিনি।

২০২১ সালের জানুয়ারীতে রবিউলকে ডাক্তার টেস্টোস্টেরন লেভেল টেস্ট করতে দিলে দেখা যায় তার ফ্রি টেস্টোস্টেরন লেভেল কমে ৫.৫ এ চলে এসেছে।

ডাক্তার রেফারেন্স ভ্যালু দেখে বললেন টি লেভেল ঠিক আছে, কিছু মেডিসিন দিলে সমস্যার উন্নতি ঘটতে পারে। মেডিসিনাল ট্রিটমেন্ট শুরু হল।

কিন্তু রবিউল তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গত দু বছরে যে ব্যবসায়িক ভুলগুলি করেছিলেন এগুলো তার ব্যবসাকে ধ্বংস করে দেয়। ২০২১ সালের জুনে এসে রবিউল আবিষ্কার করেন, ধারাবাহিক ভুল সিদ্ধান্তের জন্য টানা লোকসানের ফলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল্য কমে ২ কোটি টাকায় এসে দাড়িয়েছে।

২০২১ সালের নভেম্বরে তার সাথে আমার কথা হয়। আমি পেলাম একজন ধ্বংস হয়ে যাওয়া মানুষকে। একসময় তার তীব্র সাহস, উদ্যম আর আত্মবিশ্বাস ছিল, ছিল ক্ষুরধার বুদ্ধি। সেই মানুষটাই ভোতা, খোড়া এক অসহায় পুরুষে পরিনত হয়েছেন স্ট্রেস আর সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশানে ভুগে একটু একটু করে নিজের টেস্টোস্টেরন লেভেল হারিয়ে। নভেম্বরে ওনার ফ্রি টি লেভেল ছিল ৩.৮৮।

রবিউল সাহেবকে একটু বাইরে বসতে বলে আমি ওনার স্ত্রীর সাথে বেশ খানিকটা সময় কথা বলে বোঝালাম আসলে কি ঘটেছে।

রবিউল সাহেবের টি লেভেল গত দুই মাসে ৪.৫৫ এ এসেছে, কিন্তু এটাও প্রয়োজনের চেয়ে কম। নরমাল রেঞ্জের বাউন্ডারিতে থাকা ফ্রি টেস্টোস্টেরন লেভেল আসলে লো টেস্টোস্টেরন লেভেলের মধ্যেই পড়ে।

রবিউল সাহেব তার প্রতিষ্ঠান কিভাবে দাড় করাবেন আবার, বুঝতে পারছেন না। তার আগের মত সাহস নেই, উদ্যম নেই, ঝুকি নেয়ার ক্ষমতা নেই।

রবিউল সাহেব ব্যায়াম করতেও আগ্রহ বোধ করেন না এখন। তিনি হয়ে গেছেন স্রেফ অন্য একটা মানুষ।

টার্নিং পয়েন্টস:

১) প্রেগন্যান্সির পর স্ত্রীর ডিপ্রেশন দেখলেই দ্রুত তাকে ডাক্তার-সাইকোথেরাপিস্ট দেখান এবং এর সাথে ওয়েট গেইন/ঘুমের সমস্যা বা পায়ের মাসলের ক্র‍্যাম্প দেখা দিলে ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের শরনাপন্ন হোন

২) স্ট্রেস থেকে টিজি-এলডিএল বাড়ার ঘটনাকে আমরা প্রায়ই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে চর্বিজাতীয় খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেই। এর ফল হয়, শরীর স্বাভাবিক স্টেরয়েড হরমোন তৈরি কমিয়ে দেয়। এর ফলে দেখা দিতে পারে লো সেক্স ড্রাইভ ইস্যু।

৩) পুরুষের কর্মোদ্যীপনা, সাহস, আত্মবিশ্বাস আর ঝুকি নেয়ার ক্ষমতার অনেকটাই নির্ভর করে তার টেস্টোস্টেরন লেভেলের ওপর। সেক্সুয়াল ডিজফাংশান হলে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ হারায় নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জরুরী আত্মবিশ্বাস। তাই বিশেষভাবে ব্যবসা যারা করেন, তাদের জন্য টেস্টোস্টেরন লেভেল ধরে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Share
admin