বডি মিজারমেন্ট এবং বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা বডি ওয়েইট নিয়ে যতটা মাথা ঘামাই তার চাইতে অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল বডি মিজারমেন্ট এবং বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ।
ব্যাপারটা বোঝাই।
ধরা যাক, একজন পুরুষের ওজন ৭৪ কেজি, উচ্চতা ৫.৭ ইঞ্চি, তার পেটের মাপ ৪১ ইঞ্চি, কোমর ৩৭ ইঞ্চি। পক্ষান্তরে আরেকজন পুরুষ, ৫.১০ ইঞ্চি উচ্চতা, ৯৬ কেজি ওজন, পেটের মাপ ৩৮ ইঞ্চি এবং কোমর ৩৪ ইঞ্চি। প্রথমজনের বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ ২৯%, দ্বিতীয়জনের বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ ১৮%।
এখন, ২য় ব্যক্তির ওজন ১ম ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি, বিএমআই দ্বিতীয়জনের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আসবে সুনিশ্চিতভাবেই এবং তিনি মনে করতে পারেন তিনি ওভারওয়েইট।
কিন্তু তার বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ কম, মাসল মাস বেশি এবং এবডোমিনাল ওবিসিটি, যেটা সবচেয়ে বড় ভয়ের কারন সেটা তার নেই।
এই জায়গায়, ওজন বেশি থাকাটা আসলে কোন সমস্যাই না বরঞ্চ এটা এডভান্টেজ।
আবার ধরা যাক, দুজন নারী, একজনের ওজন ৫৭ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, বডি মিজারমেন্ট বাস্ট-ওয়েস্ট-বেলি-হিপ যথাক্রমে ৩৭-২৭-২৯-৩৮; আরেকজনের ওজন ৫৫ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, বডি মিজারমেন্ট ৩৪-২৯-৩১-৩৬। দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয়জনকে আমরা মনে করছি হালকা, স্লিম। বাস্তবে তার এবডোমিনাল ওবিসিটি আছে এবং তিনি মেটাবলিক ডিজিজের ঝুকিতে বেশি আছেন।
মেয়েদের বডি মিজারমেন্ট ছেলেদের চেয়ে কমপ্লেক্স এবং মোর হরমোনালি ডমিনেটেড। দক্ষ একজন প্রফেশনাল বডি মিজারমেন্ট নিয়ে কাজ করলেই কোন কোন ক্ষেত্রে বুঝে যান কি ধরনের হরমোনাল ইমব্যালেন্স আছে। অনেক সময় বডি মিজারমেন্ট রোল প্লে করে কোমর ব্যথা ও এ সংক্রান্ত দুর্বলতা-আঘাতের ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে। একই কারনে, মেয়েরা অনেক অল্প বেলি ফ্যাট নিয়ে পুরুষদের তুলনায় বেশি ভুগতে পারেন।
আবার, মেয়েদের ক্ষেত্রে বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজেরও ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। ১ম নারীর বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ দ্বিতীয়জনের চেয়ে বেশি হবে, কিন্তু তার ফ্যাটগুলো ন্যাচারাল পজিশনে সঞ্চিত হয়েছে, দ্বিতীয়জনের আনন্যাচারাল।
মেয়েদের সাধারনত ফ্যাটি লিভার কম হয়, কারন তাদের সাবকিউটেনাস ফ্যাট স্টোরেজের স্পেস বেশি থাকে। কিন্তু তাদের মাসল মাস-মাসল টোন দুটোই পুরুষদের চাইতে খারাপ হয়, গ্লাইকোজেন স্টোরেজও কম হয়, ম্যাগনেসিয়াম বডি পুলও কম হয়। ফলে সহজে তারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের চক্করে পড়ে যান।
বডি মিজারমেন্টের এই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে, কারন শরীরের ওজন বাড়া আর ফ্যাট বাড়া এক কথা নয়। ওজন বাড়া আর মিজারমেন্টে গড়বড় হওয়া এক কথা নয়। এই বিষয় নিয়ে নিউট্রিশন সায়েন্সে একটা শাখাই আছে, এন্থ্রোপোমেট্রিক মিজারমেন্ট। আনফরচুনেটলি, বাংলাদেশে এটা ভালভাবে খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানো হয়।
প্রফেশনাল কনসাল্টেশন নেয়ার আগে নারী-পুরুষ যেকোন প্যাশেন্টেরই নিজের বডি মিজারমেন্টস-বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ চেক করা উচিত এবং এটা আমাদের লাইফস্টাইলের অংশ হওয়া উচিত। একটা মিজারমেন্ট টেপ আর একটা ফ্যাট ক্যালিপার, একটা বাথরুম স্কেল, খুব বেশি কঠিন নয় বিষয়টা।
দু’সপ্তাহে একবার মাপাই যথেষ্ট।
আর হ্যা, প্রতিদিন ওজন দেখে নিজেকে স্ট্রেসে ফেলার কোন দরকার নেই।