যে উন্নয়ন শুধু বস্তুগত প্রাচুর্যের স্বপ্ন দেখায়, তা আসলে উন্নয়ন না, তা সর্বনাশ!
আমরা মনে করসি, বেশি বেশি চাল আর গম ফলাইলে আমরা হয়তো খুব ভাল থাকবো। তো আমরা কি করলাম??
আমরা প্রচুর কীটনাশক আর রাসায়নিক সার ব্যবহার করা শুরু করলাম। স্পেসিফিক জাতের চাষ শুরু করলাম সবখানে, ফলে লোকাল জাতগুলা হারায়ে যাইতে থাকলো।
এরপর আমাদের স্পেসিফিক জাতের ধান-গম-ভুট্টা চাষ করতে গিয়া আমাদের স্পেসিফিক কোয়ালিটির মাটি তৈরি করার দরকার পড়লো। এই মাটির মাইক্রোবায়োম আলাদা। এই মাটির মিনারেল প্রোফাইল আলাদা। এই মাটিতে আগের মাটির পোকামাকড় বাচে না, আগের মাটিতে যে জীবানুরা জন্মাইতো আর বাইড়া উঠতো এই মাটিতে তারা সবাই মইরা গেলো।
আমরা অনেক অনেক সিরিয়াল গ্রেইন ফলাইলাম। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইলাম।
আমরা গাছগুলার দিকে তাকাইলাম না। আমরা তাকাইলাম না সেই মাইক্রোবায়োমের দিকে, যাদের কারনে মাটিটা মাটি ছিল, তাকাইলাম না সেই পোকাদের দিকে, যেই পোকাদের জন্য ক্ষেতগুলা ক্ষেত ছিল।
পোকাদের সাথে সাথে আমরা হারাইলাম সেই পাখিদের, যারা পোকাগুলা খাইয়া বাইচা থাকতো। ধীরে ধীরে পোকা না থাকায় ব্যাঙেরাও হারায়ে গেল, হারায়ে গেল ব্যাঙ খাওয়া সাপেরা। সাপেরা হারায়ে যাইতে থাকায় বাড়লো ইদুরের দল। আমরা মহাশক্তিধর মানুষ, আমরা আবার ইদুরমারা বিষে ক্ষেত ভরাইলাম।
অনেক অনেক বছর পর, আমরা এখন আগের মত দৌড়ঝাপ করতে পারি না। আমাদের শরীর শ্লথ হয়ে গেসে। আমরা এখন প্রায়ই হাই ব্লাড প্রেশারে ভুগি, প্রায়ই আমাদের কোমরে দরদ হয়, হাড়ক্ষয়ে আমরা কাবু হয়ে যাই চল্লিশের আগেই। হার্টের রোগ ধারন করসে মহামারী আকার, ঘরে ঘরে ডায়বেটিস, আমাদের খাওন আছে, খাওয়ার তৌফিক আল্লাহ উঠায়ে নিয়ে গেসে।
অনেক অনেক পরে এখন আমরা বুঝতে পারতেসি, আমরা দুনিয়ার উপর জুলুম কইরা ফেলসি।
দুনিয়ার হক্ব কেবল আমাদের একার না আমরা ভুইলা গেসি, আমরা ভুইলা গেসি, খোদাও আমাদের একার খোদা না। যে পাখিটা পোকা না খাইতে পাইয়া মারা গেসে, অথবা কৃত্রিম সারে বদলায়ে যাওয়া মাটিতে টিকতে না পাইরা যে মাইক্রোবটা ঝাড়েবংশে নাই হইয়া গেসে, খোদার হুকুমতে তার জন্যেও জায়গা ছিল, খোদার দরবারে তারাও ফরিয়াদ করতে পারে।
আমরা বুঝতে পারতেসি, কৃত্রিম সার দিয়া বেশি সিরিয়াল গ্রেইন ফলাইতে গিয়া আমরা সেই মাইক্রোবায়োম শেষ কইরা ফেলসি যারা মাটি থেকে ম্যাগনেসিয়াম টাইনা আনতো ফসলে। ফসল থেইকা ম্যাগনেসিয়াম পাইতাম আমরা খাওনের ভিতর। আমাদের শরীরে প্যারাথাইরয়েড-থাইরয়েড-ক্যালসিটোনিন-ভিটামিন ডি ফাংশনাল থাকতো, আমাদের এনার্জি মেটাবলিজম প্রোপারলি ফাংশনাল ছিল।
এখন আমার মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম নাই, তাই আমার ফসলেও ম্যাগনেসিয়াম নাই। মাটির মিনারেল প্রোফাইল বদলায়ে গেসে, আমরা সবজি চাষ করলে সবজিতেও ম্যাগনেসিয়াম থাকে না।
আমাদের মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম না থাকায় আমাদের গরু-ছাগল-হাস-মুরগী ম্যাগনেসিয়াম পায় না। তাদের গোশত-ডিম থেকে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া কঠিন হয়ে গেসে।
আমাদের মালদার-শানদাররা বিরাট বিরাট কারখানা বসায়ে সমস্ত নদীর পানি নষ্ট কইরা ফেলসেন, খালের পানিতে পর্যন্ত এখন হেভি মেটাল, ডিটারজেন্ট। আমাদের শহরগুলাতে আমরা এখন সফটেনড, ট্রিটেড ওয়াটার খাই, নদীর পানির সেই ম্যাগনেসিয়াম আমাদের কিসমত থেইকা উইঠা গেসে।
আমরা ছাই ফেইলা দিয়া ধরসি টুথপেস্ট, ফ্লোরাইড রিচ টুথপেস্ট। টুথপেস্টের ফ্লোরাইড এতকিছুর পরেও শরীরে যা ম্যাগনেসিয়াম থাকে তারে ম্যাগনেসিয়াম ফ্লোরাইড বানাইতেসে, আই মিন সেলাইট। সেলাইটের আয়নিক বন্ড ভয়ংকর শক্ত, সহযে ভাঙ্গে না। আমাদের ম্যাগনেসিয়াম ডিপ্লেশান বাড়ে আরও।
আমরা এখন কারনে অকারনে ব্যথায় ভুগি, ডিপ্রেশনে ভুগি, মাসলে খিচুনি হয়, আমাদের মাসল রিলাক্স্যান্ট খাইতে হয়, খাইতে হয় পেইন কিলার। ম্যাগনেসিয়াম লেভেল আরো কমে।
আমরা ড্রাগ সিস্টেম ডেভেলপ করসি এমন সব ড্রাগ দিয়া যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রো ইনফ্ল্যামাটরি। এদের কারনে ম্যাগনেসিয়াম আরো কমে। আমরা এমন তেল খাই যা আসলে তেলই না। আমাদের পাকস্থলী ওভাররিএক্ট করে, আমরা খাই প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর বা এন্টাসিড।
ম্যাগনেসিয়াম লেভেল আরো কমে।
এইসব কোন কিছুই হইতো না, যদি না একদিন আমরা ঐ মাটির উপরে জুলুম না করতাম, ঐ মাইক্রোবায়োম, ঐ পোকার উপর জুলুম করতাম। আমরা এইরকম অসহায় হইতাম না, যদি আমরা নদীর উপর জুলুম না করতাম। এইসব না করলে হয়তো ম্যাগনেসিয়াম সাইকেলটা ঠিক থাকতো আজকে।
আমাদের আজকে খাবার আছে, শরীর নাই। শরীর নামের বোঝাটা আমরা বাইচা থাকার জন্য বইয়া বেড়াই জীবনভর। আমাদের তাই হায়াত আছে, সুকুন উইঠা যাইতেসে।
আমরা ভুইলা গেসিলাম, দুনিয়ায় আমাদের না শুধু, তাদেরও আছে হিসসা। দুনিয়াতে কেউ একা একা ভাল থাকতে পারে না। আমরা ভুইলা গেসিলাম, ফরিয়াদ খোদার দরবারে শুধু মানুষই করে ব্যাপারটা এমন না। ফরিয়াদ পাখিরাও করে, করে সাপেরাও, খোদা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে জীবানু তার ফরিয়াদ শোনার ব্যাপারেও ক্ষমতাবান।
যে উন্নয়ন শুধু বস্তুগত প্রাচুর্যের খোয়াব আমাদের দেখায়, তা আসলে উন্নয়ন না, তা সর্বনাশ।