সঠিক ডায়েট পারে ফ্যাটি লিভার সমাধান করতে
হানিফ সাহেবের অনেকদিন ধরেই খাবার পর পেটের ডানদিকে খানিকটা ব্যথা হত। চর্বি জাতীয় খাবার খেলে ঘন্টার পর ঘন্টা পেট ফুলে থাকতো, প্রায় সময়ই দেখা যেত পাতলা পায়খানা হচ্ছে।
এরপর ধীরে ধীরে তার ওজন বাড়তে থাকে, ৫.৬ ফুট উচ্চতায় প্রথমে ৭২, এরপর ৭৬, এভাবে করে ৪ বছরে ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ কেজিতে। কোমরের মাপ হয় ৪৪ ইঞ্চি।
এসময় দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপ, ১৮০/১০০ রক্তচাপ হয় তার জন্য নিয়মিত ঘটনা। কোলেস্টেরল লেভেল টেস্ট করার পর দেখা গেল, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমান গিয়ে ঠেকেছে ১২৩০ এ! হার্টে ধরা পড়লো ইশকেমিয়া, মানে রক্ত চলাচলের অভাব। এসময় ফাইব্রোস্ক্যান করে জানা গেল তার গ্রেড থ্রি ফ্যাটি লিভার আছে।
ডাক্তার তাকে আটটা ওষুধের একটা লম্বা তালিকা দিলেন, যেগুলো তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য খেয়ে যেতে হবে।
বেশ কয়েক মাস ওষুধ খেয়েও তেমন উন্নতি না পাওয়ায় হানিফ সাহেব চলে গেলেন প্রথমে বেঙ্গালুরু, এরপর ফিরলেন দেশে। পরে দেখা গেল যেই লাউ সেই কদু। ওষুধ একবেলা কোনভাবে মিস হলেই প্রেসার সেই আগের জায়গায় চলে যায়।
এরপর তিনি গেলেন সিঙ্গাপুর র্যাফলস হসপিটালে। র্যাফলস থেকে ফিরে ভাল ছিলেন মাস ছয়েক, কোলেস্টেরল কমে নামলো ৩৩০ এ। কিন্তু এসময়ে শুরু হল তার ভীষন পেটব্যথা এবং কষা পায়খানা, সাথে যখন তখন প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে ঘেমে যাওয়া। ক্রমেই শারীরিকভাবে দুর্বল হতে থাকা হানিফের ব্যবসাই থেমে যাওয়ার উপক্রম হয় একপর্যায়ে, তিনি মোট ৪ বার র্যাফলস ও থমসন্স হসপিটালে দেখিয়েও সমস্যা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারলেন না।
এই সমস্ত সমস্যার মূল ছিল আসলে ফ্যাটি লিভার ও হেপাটোমেগালি বা লিভারের আকার বড় হয়ে যাওয়া। এটা থেকে কোলেস্টেরল বেড়েছে, বাইল এসিড তৈরি হওয়া কমেছে, ফলে উনি ফ্যাট জাতীয় খাবার হজম করতে পারছিলেন না। কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেয়ে বাইল এসিড আরো কমেছে। এরপর শুরু হয়েছে স্টেরয়েড হরমোন তৈরির অভাবজনিত শারীরিক দুর্বলতা।
আমার কাছে আসার পর হানিফ সাহেবের কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম, তার ঐ প্রথমদিকে পেটের ডানপাশে ব্যথা হওয়াটা ছিল ফ্যাটি লিভার।
৮ মাস টানা কনসাল্টেশনে থাকার পর হানিফ সাহেব এখন প্রেসার-কোলেস্টেরলের ওষুধ ছাড়াই ভাল আছেন।
তিনি ১২ ঘন্টা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করেছেন। মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট ও লো কার্ব ডায়েট করেছেন, মাঝখানে দুই মাস করেছেন কিটো।
এখন ওনার ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে ১২০ এর মধ্যেই, ফ্যাটি লিভারও সেরে গেছে।
হার্টবিট নরমাল থাকে, চেস্ট পেইনও নেই।
খুব স্বাভাবিক এবং সহজ, কিন্তু কঠিন শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করে সুস্থ থাকতে চান বাকিটা জীবন।
হানিফ এখন জানেন, সিঙ্গাপুর গিয়েও ফ্যাটি লিভারের সমাধান হয় না যদি না ডায়েট ঠিক থাকে।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংকে জানুন, দেশের বাইরে দৌড়াদৌড়ি না করে বাড়িতেই সুস্থ হোন ফ্যাটি লিভার থেকে।