সঠিক নিউট্রিশনাল ম্যানেজমেন্ট একজন মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ করতে সক্ষম।
রাইসা আনোয়ার(ছদ্মনাম) রাজধানীর একটি আর্কিটেকচার ফার্মে কাজ করছিলেন বিগত প্রায় ৬ বছর যাবত। তিনি একজন তরুন আর্কিটেক্ট, পড়াশোনা করেছেন দেশসেরা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে।
ছাত্রজীবনে রাইসা যেটা কোনদিনই অনুভব করেন নি তা হচ্ছে, কোন পুরুষের প্রতি আকর্ষণ। তিনি ভাবতেন এটা স্বাভাবিক এবং বিয়ের পর এটা ঠিক হয়ে যাবে। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপে তিনি কখনো খেয়ালই করেন নি যে তার মাসিকও কখনো নিয়মিত ছিল না এবং মাত্র দুদিন তার ভালমত ব্লিডিং হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিয়ের রাতে তিনি বুঝতে পারলেন তার কোন স্বাভাবিক যৌন অনুভুতি নেই।
ব্যাপারটা তিনি স্বামীর কাছ থেকে লুকোলেন। ভাবলেন আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
ব্যাপারটা মোটেও তা ছিল না।
বিয়ের ২ বছরেও সমস্যাটা সমাধান না হওয়ায় প্রতিটি রাত রাইসার কাছে দুঃস্বপ্নে পরিনত হল। গাইনোকলোজিস্ট-সেক্সোলজিস্টের কাছে গিয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ততদিনে স্বামীর সাথে সম্পর্ক একেবারেই খারাপ হয়ে গেল।
বিয়ের তৃতীয় বছরের শেষে ডিভোর্স হয় ওনাদের।
রাইসা ভেবেছিলেন আর বিয়ে করবেন না। কিন্তু জীবন মানুষকে আসলে ভিন্ন ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়, একটা পর্যায়ে রাইসা সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে করবেন তবে বিয়ের আগে একবার আমাকে দেখাবেন। ততদিনে তার মাসিক একেবারেই অনিয়মিত, ছয় মাসে একবার হয়।
সারাদিন ক্লান্ত আর হতাশ লাগতো, নিজেকে ছোট মনে হত।
প্রায়ই মোটিভেশনাল ভিডিও দেখতেন তিনি, নিজেকে বোঝাতেন যে সব ঠিক আছে। কিন্তু হরমোনাল ইমব্যালেন্সের ডিপ্রেশনকে আসলে মোটিভেশনাল স্পিচের ছেলেভোলানো বুলি দিয়ে ঠিক করা যায় না।
রাইসার নিউট্রিশনাল ম্যানেজমেন্ট যখন আমি শুরু করলাম তখন তার বয়স ৩০, ওজন ৫৮, উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। ডায়গনোসিসে দেখা গেল, উনি আসলে এস্ট্রোজেন ই-২ এর অভাবে ভুগছেন, এবং ওনার ভিটামিন ডি লেভেল খুবই কম। আমার সন্দেহ হল শুধু ভিটামিন ডি এর সমস্যা না আরো কিছু!!
অনুসন্ধানের পর বুঝলাম ভিটামিন ই, জিংক আর ফোলেট ডেফিসিয়েন্সি আছে ওনার। দুই ওভারিতেই ৫-৬টা সিস্ট ছিল তখন।
শুরু হলো ম্যানেজমেন্ট। লো এস্ট্রোজেন যাদের থাকে তারা সাধারনত হাই প্রোটিন-মডারেট ফ্যাট মেডিটেরেনিয়ান ডায়েটে বেশ ইম্প্রুভমেন্ট পান।
প্রায় ১০ মাসের ধারাবাহিক ম্যানেজমেন্টের পর গত বছর নভেম্বর মাসে রাইসা স্বাভাবিক অনুভব করতে শুরু করলেন। ফেব্রুয়ারীতে রাইসার সিস্ট একেবারেই রইলো না, আমি তখন ওনাকে ডিসচার্জ ডায়েট দিয়ে বললাম এখন আর দেখাতে হবে না। বছরে একবার এলেই চলবে।
রাইসা আপু এবারে ঈদের পর বিয়ে করেছেন এবং ফিরে পেয়েছেন স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন।
পুষ্টিকে বাংলাদেশে কাপের পর কাপ ভাত মাপা, কিচেন স্কেলে সবজি-মাপার মত একটা বিষয় বলে মনে করা হয়। আমরা আসলে জানিই না, সঠিক নিউট্রিশনাল ম্যানেজমেন্ট একজন মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কোথায় নিয়ে যেতে সক্ষম।
রাইসা আপুর বৈবাহিক জীবন ভাল কাটুক।