সেক্সুয়াল হেলথ ও মেন্টাল হেলথ
সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান ভারত ও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে একটা জাতীয় সমস্যায় পরিনত হয়েছে।
অবস্থা কত ভয়াবহ, এটা বুঝতে গেলে আগে আমাদের দুটো ধারনাকে বুঝতে হবে, লাইফস্প্যান আর হেলথস্প্যান।
লাইফস্প্যান হল মোট জীবনকাল, আর হেলথস্প্যান হচ্ছে মোট জীবনকালের মধ্যে যে সময়টা আমরা হেলদি অবস্থায় কাটাচ্ছি, সে সময়টা।
ধরা যাক একজন মানুষ ৭৫ বছর বাচলো, এটা তার লাইফস্প্যান, কিন্তু এর মধ্যে সে সুস্থ ছিল মাত্র ১৫ বছর। তাহলে তার হেলথস্প্যান হবে ১৫ বছর।
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের মানুষের সেক্সুয়াল লাইফস্প্যান অত্যন্ত সীমিত। জীবনে গড়ে ৩০ বছর বয়স থেকে শহুরে মধ্যবিত্তরা রেগুলার সেক্সলাইফে প্রবেশ করে, এবং ৪২-৪৫ বছর বয়সে এসে এই সেক্স লাইফ ইরেগুলার সেক্স লাইফে পরিনত হয়। এরপরেও ঢিমেতালে চলে দাম্পত্য সম্পর্ক এবং তা মোটামুটি শেষ হয়ে যায় ৬৫ বছর বয়সে।
গড় সেক্সুয়াল লাইফস্প্যান তাই আমরা ধরছি, ৩৫ বছর। কিন্তু সেক্সুয়াল হেলথস্প্যানের কি অবস্থা সেটা না দেখলে আমরা বুঝতে পারবো না যে আসলে আমাদের দেশের মানুষের সেক্সুয়াল হেলথ কোনদিকে যাচ্ছে।
রেগুলার সেক্স লাইফ বলতে আমি সপ্তাহে অন্তত চারবার সেক্স করাকে বুঝিয়েছি। হেলদি সেক্স বলতে যথেষ্ট পরিমান ফোরপ্লে(গড়ে বিশ মিনিট) সহ মোট ২৫-৩০ মিনিটের সেক্স(যেখানে ৫+ মিনিট ভিগোরাস পেনিট্রেটিভ ইন্টারকোর্স থাকে) সেটাকে বোঝানো হয়েছে।
এই ধরনের সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স বাংলাদেশের একজন মানুষ জীবনে কতদিন পায়??
আনফরচুনেটলি, এ ব্যাপারে আমাদের হাতে যথেষ্ট ডেটা নেই।
যেহেতু টেস্টোস্টেরন লেভেল বাড়ানোর জন্য এবং নিজেদের সেক্সুয়াল ইস্যুজ নিয়ে অনেকেই আমার কাছে আসেন, তাই আমার গত বছর তিনেকের অবজার্ভেশন থেকে আমি বলতে পারি, খুব কম বাংলাদেশী পুরুষই তিরিশ বছরের পর সপ্তাহে ৫বার ৫ মিনিট ভিগোরাস পেনিট্রেটিভ সেক্স করতে পারেন, এবং সপ্তাহে ২ বার ৫+ মিনিট স্টে করতে পারেন, এমন পুরুষের সংখ্যাও খুব বেশি না, সম্ভবত আমার প্যাশেন্টদের মধ্যে সংখ্যাটা ৪০% এর কম।
নারীদের ক্ষেত্রে, আমি খুব কম নারীকেই (সব মিলিয়ে ৫-৬ জনকে) পেয়েছি যিনি হেলদি সেক্সুয়াল লাইফ লিড করেন এবং যার লিবিডো লেভেল স্বাভাবিক।
আমাদের স্ট্রেসফুল জীবনপদ্ধতি আমাদের সেক্সুয়াল হেলথ নষ্ট করছে, যার প্রভাব পড়ছে জীবনের সমস্ত স্তরে। আমাদের কর্মশক্তি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে, সেই সাথে আমরা ক্রমেই বদমেজাজ ও আচরনের ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে শুরু করছি। আমাদের স্ট্রেস কমছে না, যার ফলে হরমোনাল ইমব্যালেন্স আমাদের ওজন বাড়াচ্ছে, আমরা ডায়বেটিস, অস্টিওপোরোসিস আর হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছি।
বাস্তবে, বাংলাদেশের মানুষের সেক্সুয়াল লাইফস্প্যান ৩৫-৪০ বছর হলেও সেক্সুয়াল হেলথস্প্যান সব মিলিয়ে দশ বছরও নয়।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম, ইসলামে সেক্সুয়াল হেলথকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল কালচারের কারনে বাংলাদেশে সেক্সুয়াল হেলথ ব্যাপারটাই চাপা পড়ে থাকে নানান তথাকথিত সামাজিক প্রয়োজনের নিচে। এর ফল হচ্ছে, মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়া সেক্সুয়াল এনার্কি বা যৌননৈরাজ্য।
মানুষকে মানসিক সুস্থতা দিতে হলে, তাদের সেক্সুয়াল হেলথকে উন্নত করতে হবে।