সেক্সুয়াল হেলথ ও মেন্টাল হেলথ – ২
বাংলাদেশের শহরগুলোতে পুরুষেরা প্রতিদিন কত ঘন্টা সময় ফ্রি থাকে, একটু ভেবে দেখি চলুন।
গড়ে অফিস থেকে ফিরতে রাত ৯টা। অনেকেই আরও দেরিতে ফেরেন, আর সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ফিরতে পারেন খুবই কম মানুষ। করপোরেট বাস্তবতায় এটা একরকম বিলাসিতাই বলা যায়।
পরদিন অফিসে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতে হয় সকাল ৭টা।
এই দশঘন্টার মধ্যে আসলে তার পরেরদিন অফিস করার প্রিপারেশান নিতে হয়। খাওয়া-গোসল-ঘুম-ফ্যামিলির সাথে বেইসিক কমিউনিকেশান সারতে হয়।
এতকিছুর পর একজন পুরুষ যে জিনিসটার সবচেয়ে অভাব বোধ করেন, তা হল মানসিক বিশ্রাম। মানসিক বিশ্রামটা না পেলে আসলে সেক্সুয়াল হেলথকে রিগেইন করার আসলে উপায় অত্যন্ত সীমিত।
বাকি থাকে ছুটির দুই দিন। এরমধ্যে থাকে বিভিন্ন সামাজিকতা, সন্তানদের দেখাশোনা এবং বাবামায়ের দেখাশোনা। ডাক্তার-হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি।
আমি আগের পোস্টে বলেছি, সপ্তাহে ৪+ বার সেক্স করা প্রায় রেয়ার বাংলদেশী শহুরে পুরুষদের জন্য।
যেহেতু কক্সবাজার ইমার্জেন্সি নিউট্রিশন সেক্টরে কাজের সুবাদে আমাকে বিভিন্ন ইউরোপিয়ান জাতির মানুষের সাথে কাজ করতে হয়েছে, তাই আমি ওদের স্ট্র্যাটেজিটা খেয়াল করলাম, ওরা কি করে!!
ওদের মধ্যে যারা স্বাস্থ্য সচেতন তাদের খাওয়া দাওয়া, কাজের ধরন আসলে এমন, যে ওরা স্ট্রেসকে পাত্তাই দেয় না। ওরা বাংলাদেশে এসেও নিয়মিত জিমে যেত, কার্ডিও করতো সকালে, দুপুরের লাঞ্চ আর রাতের ডিনার টেকনিক্যালি সামলাতো যাতে পেটের চর্বি না বাড়ে, এবং নিয়মিত কিছু বেইসিক সাপ্লিমেন্টস নিত।
আর যারা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে, তারা কাজ করে আর খায়, ড্রিংক করে টু দ্যা এক্সট্রিম হাই। উইকেন্ড পর্যন্ত ধুমসে কাজ করবে। উইকেন্ডে পাগলের মত খাবে, বারে যাবে আর ড্রিংক করবে।
আমার অফিসের দুইজন এভারেজম্যানের কথা ধরি। একজন হল জর্ডান(ছদ্মনাম), আরেকজন লরেন্স(ছদ্মনাম)।
তারা প্রতিদিন উঠতো খুব ভোরে। ৫টার আগে।
উঠে তারা অফিসের জন্য প্রিপারেশান শেষ করে রেখে এরপর কার্ডিও করতে বের হতো। ২ কিলোমিটার স্থির গতিতে দৌড়ানো শেষে ওদের এপার্টমেন্টে ফিরতো, ফিরে ফ্রি হ্যান্ড করতো প্রায় দশ মিনিট। এরপর শাওয়ার নিয়ে ৩০ মিনিট ঘুমাতো।
ঘুম থেকে উঠে একটা মাঝারি কিন্তু খুবই নিউট্রিশাস ব্রেকফাস্ট নিতো।
তাতে মূলত থাকতো ব্রেড, ফল আর প্রোটিন।
অফিসে ঢোকার আগে বি ভিটামিন্স, জিংক আর ভিটামিন ডি খেয়ে ফেলতো ওরা। এরপর বেলা ১টা পর্যন্ত মেশিনের মত কাজ করতো।
১টায় ওদের যে লাঞ্চটা, সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং। সবজি আর ডাল ছাড়া ওদের প্রায় তেমন কিছুই খেতে দেখতাম না লাঞ্চে, আসলে কখনোই দেখি নি।
ব্যাপারটা কি এখানে??
ব্যাপারটা মূলত, ওরা চাইতো না অফিসের মাঝখানে শরীরটা ভারী করে ফেলতে। তাহলে কাজের গতি কমে যাবে, আর কাজের গতি কমলে বাসায় গিয়ে রিল্যাক্সড থাকা যাবে না। টানা পাচ ছয় ঘন্টা কাজের পর কার্ব খেলেই ঘুম ঘুম আসে, তাই ওরা লাঞ্চে কার্ব খেত না। সর্বোচ্চ আপেল বা কলা।
অফিস থেকে ফেরার পর ওরা কিছুক্ষন ওয়েট ট্রেইনিং করতো, তারপর একটা হট ওয়াটার শাওয়ার নিয়ে খাওয়া দাওয়া করতো, তারপরে আরেকটা ছোট্ট পাওয়ার ন্যাপ(ঘুম)।
এই ন্যাপটা থাকতো এরাউন্ড আধ ঘন্টার। ন্যাপের আগে ওরা আরেকবার ওদের সাপ্লিমেন্ট নিতো। সাধারনত এতে প্রোটিন পাউডার, ম্যাগনেসিয়াম আর এন্টি অক্সিডেন্টস থাকতো।
এই দুইটা ন্যাপ ওদেরকে রিএনার্জাইজ করতো নাইটলাইফের জন্য।
এই ধরনের বেশ কিছু কলিগ আমার ছিল, এবং তারা পার উইক অন এভারেজ ১৪-১৮ বার সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স করতো, উইথ ভিগোর।
বাংলাদেশে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্যকে অফিসের হাতে ছেড়ে দেই। অফিস আমাদের যেদিকে খুশি নিয়ে যায়, মাসশেষে কয়টা টাকা পেয়ে পেটটাকে আরো গোল করতে পারলেই হল।
বিনিময়ে, বাংলাদেশের পুরুষরা স্যাক্রিফাইস করে তাদের ও তাদের পরিবারের ন্যুনতম মানবিক অধিকার, হেলদি সেক্সলাইফ।
চাইলে আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি, কিভাবে অফিসের স্ট্রেসটাকে ম্যানেজ করে আমরা স্বাভাবিক ফিটনেসে ফিরতে পারি।
জর্ডান বা লরেন্স কোন অতিমানব না। একজন ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, ৮৮ কেজি, আরেকজন ৫ ফুট ৭, ৬৮ কেজি। কারোই বিরাট বিরাট মাসল নেই।
তারা স্ট্রেসকে ম্যানেজ করার জন্য নিজেদের ডায়েট বদলেছে, এক্সারসাইজ করেছে আর নিউট্রিশনাল নিড ফুলফিল করেছে।
বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগে ৪০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে প্রায় কিছুই পড়ানো হয় না। আর মেডিক্যাল কলেজগুলোতেও লাইফস্টাইল স্টাডিজ নাই বললেই চলে।
আমরা আসলে অসুস্থতা নিয়ে যতটা ঘাটাই, সুস্থতা নিয়ে আমাদের ততটা ফোকাস নেই।
সেক্স লাইফকে জায়গামত আনতে হলে, আমাদের খাবারের প্যাটার্ন এবং ফিজিক্যাল এক্টিভিটিতে চেঞ্জ আনতে হবে।
বিয়ের আগে এগুলি না বুঝে শুধু কলেমা পড়ে একজনকে ঘরে নিয়ে আসলেন আর সন্তান জন্ম দিয়ে সংসার করে ফেললেন, তারপর অলমোস্ট সেক্সলেস ম্যারেজ চালিয়ে গেলেন বাকিজীবন, এতে আপনার মানসিক অশান্তি বাড়বেই শুধু, কমবে না। ঠিকঠাক সেক্স না করা অসংখ্য দম্পতির জীবনে এক বাড়তি মানসিক যন্ত্রনার কারন।
আল্লাহ পাক বিয়েকে প্রশান্তির উৎস বানিয়েছেন, বোঝা বানান নাই।
We need to be smart to feel the meaning of a marriage.