ভিটামিন সি প্রটোকলে খরচ
একের পর এক ন্যাচারাল ডেলিভারির সুসংবাদ পেয়ে আপনারা অনেকেই নিজের/স্ত্রীর ন্যাচারাল ডেলিভারির জন্য সিম্যাগ প্রোটোকল নিতে চাচ্ছেন, সব সময় সবার টেক্সট-কল বা কমেন্টের রিপ্লাই দেয়া সম্ভব হয় না।
সিম্যাগ প্রোটোকল নেয়ার নিয়মটা এখানে আমরা শেয়ার করে দিচ্ছি, যাতে সবার সুবিধা হয়।
১) সিম্যাগ প্রোটোকল শুরুর সঠিক সময় হচ্ছে প্রেগন্যান্সির ৬-১২ সপ্তাহ। তবে ১২ সপ্তাহের পরেও শুরু করা যায়। কিন্তু ২৫ সপ্তাহের পর সিম্যাগ প্রোটোকল নতুন করে শুরু করলে ফলাফল আসার সম্ভাবনা প্রায় ৫০% কমে যায়, এজন্য আমরা এসময় কেউ সিম্যাগ নিতে চাইলে সাকসেসের ব্যাপারে একটু কম আশাবাদী থাকি।
তাই প্রেগন্যান্সির প্রথম ৬-১৬ সপ্তাহের ভেতরে সিম্যাগ শুরু করাই বাঞ্চনীয়।
২) সিম্যাগে মোট কনসাল্টেশন ৪ টি।
রোগীর অবস্থাভেদে এটা সজল ভাই নিজেই সিদ্ধান্ত নেন পরের কনসাল্টেশন কবে হবে, তবে প্রায় সবার ক্ষেত্রেই ৪টি কনসাল্টেশন লেগে থাকে। কেউ কেউ ৩টি এবং কেউ কেউ সর্বোচ্চ ৮টি পর্যন্ত কনসাল্টেশন নেন প্রয়োজন অনুসারে, কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড ৪টি। তার মানে কনসাল্টেশন বাবদ খরচ-৯ মাসে ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা, গড়ে ৮ হাজার টাকা।
৩) আগে এক বা একাধিক সি সেকশন আছে এমন মায়েরাও সিম্যাগ নিতে পারেন যদি না ইউটেরাইন স্কার থাকে বা সি সেকশনের কাটা দাগটা লম্বালম্বি না থাকে। সি সেকশনের দেড় বছর পর থেকেই সিম্যাগ প্রোটোকল নেয়া যায়।
৪) ১৬ থেকে ৫০ বছর, যেকোন বয়সের গর্ভবতী মায়েদের জন্যই সিম্যাগ ন্যাচারাল ডেলিভারি প্রোটোকল প্রযোজ্য, তবে ডোজ এদিক ওদিক হতে পারে, ভিন্ন ধরনের বাড়তি থেরাপিও প্রয়োজন হতে পারে। ২৫ বছরের নিচের মায়েদের ক্ষেত্রে সিম্যাগ তিনজন বাদে বাকি সব রোগীর ক্ষেত্রে সফল, ২৫-৪০ বছরের ভেতরেও উল্লেখযোগ্যভাবে সফল এবং ৪০ বছরের ওপরে যে কয়েকজন মা এখন পর্যন্ত সিম্যাগ নিয়েছেন তাদের তিনজন ইতোমধ্যেই গত বছর ও এবছর সফলভাবে ন্যাচারাল ডেলিভারি করেছেন।
প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে গোল্ডেন রুল হচ্ছে, ১৮-২৩ বছরের ভেতর ১ম সন্তান নিয়ে নেয়া। এটা হলে বাকি সব সহজ হয়ে যায়।
৫) প্রেগন্যান্সি শুরুর আগে যেসব মায়ের ওজন ৭০ কেজির বেশি থাকে, তাদের জন্য প্রেগন্যান্সির আগে ওয়েট লসের পরামর্শ থাকবে। কোমরের মাপ কমিয়ে হিপের মাপের দশ ভাগের সাত ভাগের কাছাকাছিতে নিয়ে আসতে পারলে বাকিটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এজন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ও ডায়েটের পরামর্শ নিতে আমাদের ফাস্টিং রিলেটেড ভিডিওগুলি দেখতে পারেন।
৬) যাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম/ওভারয়ান সিস্ট বা ডায়বেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়বেটিসের সমস্যা আছে, তারা প্রেগন্যান্সির প্ল্যান করার পর থেকে অবশ্যই ফাস্টিং শুরু করবেন, প্রেগন্যান্সির পরপরই সিম্যাগ প্রোটোকল শুরু করে দিতে হবে। ব্লাড গ্লুকোজ কন্ট্রোলে না থাকলে আপনাকে নরমাল করানোর ঝুকি সহজে কোন ডাক্তার নেবেন না।
৭) সিম্যাগে ব্যায়াম একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, ব্যায়াম কোনভাবেই মিস দেবেন না। বিয়ের পর থেকেই মেয়েদের উচিত রেগুলার ওয়ার্ক আউট রুটিনে চলে আসা, তাতে করে প্রেগন্যান্সি অনেক সহজ হবে ইনশা আল্লাহ।
৮) ডায়েট ও সাপ্লিমেন্ট বাবদ গড়ে একজন সিম্যাগ মাদারের পেছনে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই খরচটা কন্সাল্টেশন ফির বাইরে, মায়ের মেইনটেন্যান্স। এই বিষয়টা প্রোটোকল শুরুর আগে ভেবে রাখা চাই। দুঃখজনকভাবে দেশে দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়তই বাড়ছে, নয়তো আরো সুলভে এই প্রোটোকল মেনে চলা সম্ভব হত।
অনেকের কাছে এটা বেশ কস্টলি মনে হতে পারে, কিন্তু একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য হাই কোয়ালিটি প্রোটিন-ফ্যাট যদি বাসাতেও খাওয়ান, খেয়াল করলে দেখবেন মাসে ৬-৭ হাজার টাকা এমনিতেই খরচ হয়ে গেছে।
৯) বয়স যাদের পয়ত্রিশের বেশি, তাদের অবশ্যই ফাইব্রয়েডস, সিস্ট আছে কিনা তা প্রেগন্যান্সি প্ল্যান করার আগে চেক করে নিতে হবে। মনে রাখবেন, বর্তমানে ত্রিশ বছর বয়সের পর মিসক্যারেজের সবচেয়ে বড় কারন সিস্ট এবং ফাইব্রয়েডস। সিস্ট-ফাইব্রয়েডস থাকলে আপনাকে সিম্যাগ প্রোটোকলের চিন্তা বন্ধ করে আগে সিস্ট-ফাইব্রয়েডস থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য কনসাল্টেশনে থাকতে হবে।
১০) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভাল সম্পর্ক সিম্যাগ প্রোটোকলে সাফল্যের হার বাড়ায় না শুধু, জীবনেও সফলতার হার বাড়ায়। দাম্পত্য সম্পর্কের যত্ন নিন, জীবন সুন্দর হবে।