Top

প্রেগন্যান্সিতে সঠিক পুষ্টি!

Sajal’s Diet Falsafa / Diet and Macro Nutrients  / প্রেগন্যান্সিতে সঠিক পুষ্টি!

প্রেগন্যান্সিতে সঠিক পুষ্টি!

কথা বলবো প্রেগন্যান্সিতে মিনারেল আরডিএ (RDA) নিয়ে।

সহজ ভাষায় নিউট্রিশনে আরডিএ বলতে বোঝায় শতকরা ৯৭-৯৮% সুস্থ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে প্রতিদিন যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ দরকার ঠিক ওই পরিমানটাই রিকমন্ডেড ডাইটারি এলাউন্সেস।

এই পরিমাণ টা ব্যক্তি বিশেষে,এক্টিভিটি,বিভিন্ন রোগের কারণে কম বা বেশি হতে পারে। অসুস্থতার কারনে অনেক সময় আরডিএ বেড়ে গিয়ে এমন লেভেলে যেতে পারে যা স্বাভাবিক অবস্থায় খেলে পেটে সহ্য হবে না।

সাধারণত,প্রেগন্যান্সিতে মিনারেল-ভিটামিনের আরডিএ(প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমান) সুস্থ মানুষের আরডিএ এর থেকে কিছুটা বেশি হয়।যেমনঃ

এনার্জি:সুস্থ মানুষের এভারেজ কিলোক্যালরি দরকার ২২০০, প্রেগন্যান্সি তে তা বেড়ে দরকার হয় যথাক্রমে প্রথম তিন মাসে ২২০০, দ্বিতীয় তিন মাসে ২৫০০ ও শেষ তিন মাসে ২৮০০ কিলোক্যালরি।

উল্লেখ্য, প্রথম তিন মাসে অধিকাংশ মানুষই ২০০০ ক্যালরিও খেতে পারেন না, বা খেলেও বমি করে দেন। তাই পরবর্তী ট্রাইমেস্টার(ত্রৈমাস)গুলিতে এটাকে পুরন করতে হয় বাড়তি খাবার দিয়ে। আমি প্রেগন্যান্সির শেষ ট্রাইমেস্টারে অবস্থা ভেদে ২৬০০-৩৬০০ ক্যালরি খেতে দেই।

প্রোটিন: সাধারণত,আদর্শ দেহ ওজনের সমান তথা ৫০ গ্রাম প্রোটিন রিকোয়ারমেন্ট থাকলে ও প্রেগন্যান্ট মা এর জন্য দরকার ৬০ গ্রাম। তবে আমাদের দেশের প্রেগন্যান্ট মায়েরা লো মাসল মাস বা হাইপোটোনিয়া নামের সমস্যায় আক্রান্ত থাকেন তাই আমি এক্ষেত্রে ৭৫-৮০ গ্রাম প্রোটিন ইনটেকের কথা বলবো প্রতিদিন।

আয়রন: ফিটাস এর জন্য অতিরিক্ত ব্লাড তৈরি করতে প্রেগন্যান্ট মা এর দরকার বাড়তি আয়রন এর।সুস্থ মেয়ে দের দরকার ১৮ মিলিগ্রাম, যেখানে প্রেগন্যান্ট মা এর লাগবে ২৪ মিলিগ্রাম। প্রেগন্যান্সিতে আয়রন খেতে হয় সেকেন্ড ও থার্ড ট্রাইমেস্টারে এবং যথাসম্ভব তা ফুড থেকে খাওয়া উচিত। তবে মায়ের এনিমিয়া থাকলে সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে ও একান্তই প্রয়োজন হলে থার্ড ট্রাইমেস্টারে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী। দিনে অতিরিক্ত ২০০ গ্রাম রেড মিট বা সপ্তাহে ২ দিন ১০০ গ্রাম করে কলিজা এক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট নির্ভরতা কমিয়ে দিতে সক্ষম।

ক্যালসিয়াম:সুস্থ দেহে ক্যালসিয়াম দরকার ৫০০ মি.গ্রা. টেক্সটবুক নিউট্রিশনে প্রেগ্ন্যাসি ক্যালসিয়াম রিকোয়ারমেন্ট দেখানো হয় ১০০০ মিলিগ্রাম কিন্তু বাস্তবে আসলে এটা প্রয়োজন হয় না। কারন প্রেগন্যান্ট মায়েরা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত ও দক্ষভাবে ক্যালসিয়াম শোষন করতে পারেন। দিনে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি ৬০০ মিলিগ্রাম আমার মতে যথেষ্ট, দুই গ্লাস দুধ বা ৫০ গ্রাম টফু, ২০০ গ্রামের মত মাছ গর্ভবতী মায়ের জন্য যথেষ্ট ক্যালসিয়াম দিতে পারে।

জিংক: প্রেগন্যান্সি তে জিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিউট্রিয়েন্ট। কারন জিংক ছাড়া ভিটামিন এ কাজ করে না, এ থেকে গর্ভাবস্থায় অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে। পক্ষান্তরে শিশুর ডিএনএর গঠন, বুদ্ধির বিকাশ, হাড় ও মাংসপেশীর গঠন, সেক্স ক্রোমোজোম তৈরিতে মূল কাজ জিংকের।

তাই এসময়ে জিংক এর আরডিএ ১২ থেকে বেড়ে হয় ১৫ মিলিগ্রাম(সুস্থ মায়েদের জন্য)। আমার মতে, প্রেগন্যান্সিতে ২০ মিলিগ্রাম জিংক অপ্টিমাম ব্রেইন গ্রোথ দিতে পারে শিশুকে। রেড মিট, মাছ ঠিকভাবে ওপরে যেভাবে বলেছি সেভাবে খেলেই হবে। জিংক সাপ্লিমেন্ট যে বেলা খাবেন সে বেলা অবশ্যই আয়রন খাওয়া এড়িয়ে যাবেন। আর অতিরিক্ত জিংক সাপ্লিমেন্ট(৫০ মিলিগ্রাম করে অন্তত ৩ সপ্তাহ) প্রিম্যাচিউর ডেলিভারির পেছনে ভুমিকা রাখতে পারে।

আয়োডিন: গর্ভাবস্থায় আয়োডিনের চাহিদা ও বেড়ে ১৫০ মাইক্রো গ্রাম থেকে হয় ১৭৫ মাইক্রো গ্রাম। প্রতি ১৭৫ এমসিজি আয়রনের বিপরীতে ১০০ এমসিজি সেলেনিয়াম যুক্ত করলে মায়েরা থাইরয়েড ইমব্যালেন্সের সমস্যা থেকে অনেকখানি নিস্তার পেতে পারেন।

সেলেনিয়াম মূলত সাপ্লিমেন্ট হিসেবেই পাওয়া যায়, আয়োডিন লবনে থাকে।

ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ভিটামিন্স নিয়ে আলাদা পোস্ট করা হবে ইনশা আল্লাহ।

Share
admin