Top

প্যাশেন্টস ডায়েরি: পর্ব – ১১

Sajal’s Diet Falsafa / Patient Diary  / প্যাশেন্টস ডায়েরি: পর্ব – ১১

প্যাশেন্টস ডায়েরি: পর্ব – ১১

গত বছরের কথা।

এক ভদ্রলোক চেম্বারে এসেছেন, সউদী প্রবাসী ছিলেন ৭ বছর। এর আগে একবাদ দেশে এসেছিলেন ৬ মাসের জন্য, বিয়ে করেছেন, সন্তান নিতেও চেষ্টা করছেন। ৬ মাসে কোন ফলাফল আসে নি।

সেবারও এলেন ৬ মাস সময় নিয়ে। কিন্তু কোন ফলাফল নেই।

শুরু হল স্ত্রীর সাথে ঝগড়া, দাম্পত্য কলহ।

চেম্বারে জিজ্ঞেস করলাম, নিজের সিমেন এনালাইসিস করেছেন দেশে ফেরার পর??

উত্তর, নাহ।

ওনার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, পিরিয়ডের অবস্থা কি??

তিনি বললেন, নিয়মিত।

আমি বললাম নিয়মিত মানে কতদিন পরপর??

তিনি জানালেন, ২ মাস পরপর ১ বার।

মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।

আপনারা দুনিয়ার সমস্ত কিছু জানেন, কবে কোন নায়িকার কোন নায়কের সাথে বিয়ে হয় ছাড়াছাড়ি হয় জানেন, দেশের রিজার্ভের কি অবস্থা জানেন, নতুন কোন ড্রেস/আইফোন/গ্যাজেট কোথায় আসলো, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কি হল তাও জানেন, শুধু জানেন না একজন মেয়ের পিরিয়ড কত দিন পর পর হওয়া উচিত সেটা।

পিরিয়ডের স্বাভাবিক চক্র হচ্ছে ২৪-৩১ দিন। এই সময়ের মধ্যে পিরিয়ড হলে সেটাকে স্বাভাবিক ধরে নেয়া যায়। টেক্সটবুক ডেফিনিশন বলে ২১-৩৫ দিনের ভেতর হলেই তা স্বাভাবিক, কিন্তু ২৪ দিনের কম ও ৩১ দিনের বেশি সাইকেল লেংথ আসলে ভাল ফার্টিলিটির উদাহরন নয়।

প্রচুর নারী আছেন যারা এই বেইসিকটা জানেন না যে এক মেন্সট্রুয়াল ব্লিডিং শুরুর তারিখ থেকে পরের ব্লিডিং শুরুর তারিখ পর্যন্ত আদর্শ দুরত্ব ২৪-৩১ দিন হওয়াটা স্বাভাবিক, দুই মাস বা তিন মাস পরপর যদি কারো নিয়মিতভাবে মেন্সট্রুয়েশান হয় সেটা স্বাভাবিক না, বরঞ্চ তা অনুর্বরতা ও হরমোনাল ইমব্যালেন্সের লক্ষন। একে অলিগোমেনোরিয়া বলে।

আপনার যদি পিরিয়ডের সময় ভয়াবহ ব্যথা+ক্র‍্যাম্প হয়, সেটাকে ডিজমেনোরিয়া বলে।

যদি একেবারেই পিরিয়ড না হয় সেটাকে এমনেরিয়া বলে।

প্রচন্ড ব্লিডিং হওয়াকে বলে মেনোরেজিয়া এবং থেমে থেমে রক্তপাত হওয়াকে বলে মেট্রোরেজিয়া।

LH, FSH এই দুটো হরমোনের ব্যালেন্স সরাসরি আপনার মেন্স সাইকেলের দৈর্ঘ্যের সাথে জড়িত, কিন্তু আরো অন্তত ১৭টা হরমোন আছে যেগুলোর বিভিন্ন একশন আপনাকে ফার্টাইল রাখে।

আরেকটা অত্যন্ত জরুরী কথা হচ্ছে, আপনার মেন্স সাইকেলের লেংথ, ধরন এবং এর সাথে সেক্স ড্রাইভের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একজন হরমোনালি অপ্টিমাইজড তরুনী-যুবতী সবচেয়ে বেশি উষ্ণ অনুভব করবেন তার মেন্স সাইকেলের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে, তথা মেন্স শেষ হবার শেষদিনের ৬-৭ দিন পর। এই সময়ে তার ওভুলেশন ঘটে।

সন্তানের জন্য যারা চেষ্টা করতে চান, তারা এটা মাথায় রাখলে ভাল করবেন।

কিন্তু যারা মাসের মাঝামাঝি সেক্স ড্রাইভ অনুভব করেন না বরঞ্চ শুধু মেন্স সাইকেল চলাকালীন সময়েই যৌনভাবে উষ্ণ অনুভব করেন, তাদের ক্ষেত্রে হরমোনাল ইমব্যালেন্স আছে বলে আমরা ধরে নেই যদিও এখনো এবিষয়ে আরো গবেষনার প্রয়োজন। তবে, সাইকেলের মাঝামাঝি সময়ে যারা স্বাভাবিক উষ্ণ আচরন করেন এবং সাইকেল চলাকালীন সময়েও একই আচরন করেন, তাদের ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, হরমোনাল ইমব্যালেন্সের সম্ভাবনা কম।

মেয়েদের সারা মাসই খিটখিটে আচরন করা, অল্পতে রেগে যাওয়া মূলত এস্ট্রোজেন-প্রজেস্টেরন বা এস্ট্রোজেন-টেস্টোস্টেরন ইমব্যালেন্সের লক্ষন। তীব্র মুড সুইং এস্ট্রোজেন ডমিন্যান্সের লক্ষন এবং উপযুক্ত কারন ছাড়া মাসব্যাপী ডিপ্রেশন লো প্রজেস্টেরনের লক্ষন।

এখানে বিষয়গুলি যতটা সহজ করে লেখা হচ্ছে ব্যাপারগুলো বাস্তবে তত সহজ না, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিনিসগুলো আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে  পুরোপুরি লেখা হচ্ছে না।মোটামুটিভাবে রোগীদের একটা ধারনা যেন থাকে, তারা যেন নিজের আচরনকে বুঝতে পারেন সেজন্যই এভাবে লেখা।

নিজের/স্ত্রীর মেন্সট্রুয়েশান সাইকেলকে বুঝুন, নিজের যৌন আচরনকে বুঝুন এবং সঠিকভাবে সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করুন, দেখবেন বাচ্চা নেয়ার জন্য ক্লিনিকে-ইন্ডিয়ায় দৌড়াদৌড়ি আর তাবিজ কবজের পেছনে দৌড়াদৌড়ি কমে যাবে।

মেন্স সাইকেল ইরেগুলার হলে আমার ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ভিডিওগুলি দেখে ফাস্টিং শুরু করতে পারেন+ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন, কাজ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।

কিন্তু এর সাথে যদি এক বা একাধিক জটিলতা+হরমোনাল ইমব্যালেন্স বা ওভারিয়ান সিস্টের মত সমস্যা থাকে, শুধু সেক্ষেত্রে প্রফেশনাল কনসাল্টেশন নেবেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি মনে রাখবেন, পিল আপনার সাইকেল রেগুলার করতে পারে মাত্র, আপনাকে ওভুলেশান বা ডিম্বানু দিতে পারে না।

সিস্ট থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন ধাপে ধাপে ৬-১২ মাস ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ও থেরাপিউটিক ডায়েট করা। ইতোমধ্যেই আমরা পেইজে এই ব্যাপারব অনেকগুলো পোস্ট করেছি, সামনে আরো করবো। তবে যাদের সিস্টের আকার বড় এবং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল ইমব্যালেন্সে ভুগছেন তাদের জন্য ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের তত্ত্বাবধানে থাকার কোন বিকল্প নেই।

Share
admin