Top

খাটি সরিষা খান, নিশ্চিন্তে খান

Sajal’s Diet Falsafa / Digestive System and Gut  / খাটি সরিষা খান, নিশ্চিন্তে খান

খাটি সরিষা খান, নিশ্চিন্তে খান

ভোজ্য তেল নিয়ে গ্রুপে কেউ কেউ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আমি সামারাইজ করি এখানে।

১) যেকোন ভোজ্য তেল খাওয়ার সময় আপনাকে প্রথমে লক্ষ রাখতে হবে, তেলটা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন করা যায় কিনা। যে তেল কোন বীজকে পিষে বা কোন সুস্থ প্রানীর চর্বি গলিয়ে তৈরি করে সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা যায় সেটা হল প্রাকৃতিক তেল। যে তেল বীজ থেকে ভাঙ্গানোর পর সরাসরি রান্নায় ব্যবহার করা যাবে না, ওটা প্রাকৃতিক ভোজ্য তেল নয়, কৃত্রিম তেল।

২) কেন কৃত্রিম তেল খাবেন না?? কারন আপনার কোষের ডিএনএ-আরএনএ পর্যন্ত আপনি যা খান, তার প্রভাব গিয়ে পৌছে। আপনার পৌষ্টিকতন্ত্র পরিবেশের সাথে হাজার হাজার বছর ধরে খাপ খেয়ে তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিনের চর্চায় পৌষ্টিকতন্ত্র নিজের জন্য গ্রহনযোগ্য অনুগুলোর একটা লিস্ট  বানিয়ে মস্তিষ্কের সাথে সমন্বয় করে নেয়। এই কাজটা মূলত করে আমাদের নাড়িভুড়ি বা গাটে থাকা ব্যাকটেরিয়ারা। আপনি যখন কৃত্রিম তেল খান, আপনার গাটে থাকা ব্যাকটেরিয়ারা সেটাকে চিনতে পারে না, এবং এই জায়গা থেকেই শুরু হয় ইনফ্ল্যামেশান। দীর্ঘমেয়াদে লো গ্রেড ইনফ্ল্যামেশান হাজারও রোগের কারন।

৩) স্মোকিং পয়েন্টঃ তেলের স্মোকিং পয়েন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন তেলের স্মোকিং পয়েন্ট যত কম থাকবে, তেল তত সহজে অক্সিডাইজড হয়ে যাবে এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যাল তৈরি করবে। ফ্রি র‍্যাডিক্যাল সব তেলই তৈরি করে, কিন্তু যে তেল যত কম তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করে তা তত বেশি ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ও ট্রান্স মলিকিউল তৈরি করে। এরমধ্যে যেসব তেলে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড বেশি, সেগুলির স্মোকিং পয়েন্ট কম হলে খুব সহজে তারা প্রচুর ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ও ট্রান্স মলিকিউল তৈরি করে। ট্রান্স মলিকিউলগুলোকেই মূলত ট্রান্স ফ্যাট বলা হয়।

৪) পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের মধ্যে ওমেগা-৩ঃওমেগা-৬ এর ব্যালেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেহে ওমেগা-৩ঃওমেগা-৬ এবং ওমেগা-৯ এই তিন ধরনের পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড দরকার হয়। আধুনিক কৃত্রিম ভোজ্য তেলের সাধারন বৈশিষ্ট্য হল এতে ওমেগা-৩ঃওমেগা-৬ এর অনুপাত থাকে ১ঃ১০-১ঃ৪০ এর মধ্যে। সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ১ঃ২০, সরিষার ক্ষেত্রে এর অনুপাত ১ঃ২.৭-১ঃ৩। এছাড়াও DHA ও EPA এর উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই দুটো ফ্যাটি এসিড ছাড়া আমাদের মস্তিষ্কের গঠন অপুর্ন থাকে।

৫) ভিটামিন কনটেন্টঃ প্রানীজ চর্বিতে ভিটামিন কনটেন্ট সবসময়েই সীড অয়েলের চেয়ে বেশি এবং বেশি বায়োএভেইলেবল থাকে। রান্নায় সাধারনত উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা হয়। সেগুলো তে যতটুকু ভিটামিন ই পাওয়া যায় ওটাই মূলত সম্বল, ভিটামিন এ, কে-২ ও ডি-৩ উদ্ভিজ্জ তেলে সেভাবে পাওয়া যায় না।

এই সমস্ত ফ্যাক্টর বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ভোজ্য তেল হবে সরিষার তেল।

সরিষার তেল-

১) প্রাকৃতিক ভোজ্য তেল

২) হাজার হাজার বছর ধরে পরিবেশ ও শরীরের সাথে মানানসই

৩) স্মোকিং পয়েন্ট মাঝারি রকম বেশি

৪) ওমেগা-৩ঃওমেগা-৬ রেশিও সবচেয়ে ভাল

৫) ভিটামিন কনটেন্ট মডারেট

৬) এন্টি ইনফ্ল্যামাটরি

সরিষার তেল উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্নংশে ভোজ্য তেল হিসেবে অনুমোদিত নয়। এর প্রধান কারন হল ইদুরের ওপর চালানো কিছু গবেষনায় পাওয়া যায়, সরিষার তেল ইদুরের হৃদপিন্ডে মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস তৈরি করে অর্থাৎ চর্বি জমায়।

একই ধরনের পরীক্ষা খরগোশের ওপর স্যাচুরেটেড ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে চালানোর ফলে খরগোশের হৃদপিন্ডে চর্বি জমার ঘটনা ঘটে।

কিন্তু মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতে সরিষার তেল ব্যবহার করেছে। পঞ্চাশ বছর আগেও এই অঞ্চলে হৃদরোগ ছিল দুর্লভ ঘটনা। বরঞ্চ নব্বই দশক থেকে সরিষার তেল থেকে সয়াবিনে শিফট করার পর ক্রমেই আমরা দেখি দেশে হৃদরোগ বেড়েছে।

আমেরিকার ক্ষেত্রেও মোট ভোজ্য তেলের ৯০% এর বেশি এখন থেকে একশো বছর আগে ছিল প্রানীজ চর্বি, তখন সেখানে হার্ট ডিজিজ সেভাবে ছিল না। হার্ট ডিজিজের সাথে প্রানীজ চর্বির সম্পর্ক কিভাবে এল, তা নিয়ে আমরা আরেকদিন কথা বলবো ইনশা আল্লাহ।

খাটি সরিষা খান, নিশ্চিন্তে খান।

Share
admin