সেক্সুয়াল মিসম্যাচ
রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ প্রবলেম নিয়ে যারা আমার কাছে আসেন তাদের একটা কমন ক্রাইসিস হচ্ছে, সেক্সুয়াল মিসম্যাচ। হাজব্যান্ডের চেয়ে ওয়াইফের লিবিডো-স্ট্যামিনা বেশি বা ওয়াইফের চেয়ে হাজব্যান্ডের লিবিডো-স্ট্যামিনা বেশি হওয়াতে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। ২০১৫ সালের জার্মান ডেটা অনুযায়ী প্রায় ৪৬% নারী কোন না কোন পর্যায়ের যৌন অক্ষমতায় ভুগে থাকেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা ৩৩%।
সাধারনত বেশি সমস্যা হয় যখন ওয়াইফ কনসাল্টেশান নিচ্ছেন, ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে তার যৌনচাহিদা প্রায় তিনগুন হয়ে যাচ্ছে। ৩০-৪০ বছর বয়সের মধ্যে সাধারনত বাংলাদেশের একজন বিবাহিত নারী সপ্তাহে ২-৩ বার সেক্স করে থাকেন। স্ট্রং ডিজায়ার ফিল করেন সপ্তাহে ৫-৬ বারের মত। তিন মাস সুপারভিশনে থাকার পর দেখা যায় তার ডিজায়ার হচ্ছে গড়ে সপ্তাহে ১৪-১৮ বার, কিন্তু হাজব্যান্ড তাল মেলাতে পারছেন না। হাজব্যান্ড সেই আনহেলদি লাইফস্টাইলেই আছেন, আর সময়ের সমস্যা তো আছেই। সপ্তাহে ৩-৪ বারের বেশি তারা সেক্স করতে পারছেন না।
তখন তারা আমাকে বলেন, যৌন চাহিদা যেন কমে যায় তেমন কোন প্ল্যান দিতে, কেননা স্বামী তাকে তৃপ্ত করতে পারছেন না।
বাস্তবতা হচ্ছে, আমি সাধারনত যৌনচাহিদা বাড়ায় এমন প্রায় কোন কিছুই সরাসরি প্রয়োগ করি না, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে সেই স্কোপ খুব বেশি নেই, আমাদের রোগীদের বেশিরভাগের সামর্থ্যও তেমন বেশি না। আমি মেটাবলিক হেলথ নিয়ে কাজ করি, স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটলে যৌনচাহিদা ও সামর্থ্য এমনিই বাড়বে।
সাধারনভাবে ৫.৩ ইঞ্চি উচ্চতার যে নারীর কোমরের মাপ ৩৩ তার চেয়ে একই উচ্চতায় অন্য একজন নারী যার কোমরের মাপ ২৭ তার যৌনচাহিদা অনেকটাই বেশি হবে। এর কারন হল রিডিউসড বায়োলজিক্যাল এইজ।
পুরুষদের ক্ষেত্রে তো এই সমস্যা সবসময়ই থাকে। একটা অংশ আছেন, যাদের বছরের বেশিরভাগ সময়ই যৌনাকাঙ্ক্ষা একেবারেই কম থাকে, এদের অনেকেরই ইরেক্টাইল ডিজফাংশান ও প্রিম্যাচিউর ইজ্যাকুলেশান থাকে। আবার একটা অংশ আছে, আমার ধারনা এরা সংখ্যায় গড়ে প্রতি পাচজনে একজন, তারা সারাবছরই উচ্চমাত্রার লিবিডো নিয়ে জীবন কাটান এবং এদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ স্ত্রীর কাছে কখনোই শারীরিক পরিতৃপ্তি পান না।
দম্পতিদের মধ্যে এই যে শারীরিক সামর্থ্যের তফাৎ, আমার ধারনা এটা শুরু হয় একদম গর্ভে থাকার সময় থেকে। একজন প্রোপারলি ব্রেস্টফেড বেইবি, যিনি প্রাকৃতিক ভাবে পৃথিবীতে এসেছেন এবং যার বাবা মা শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন এবং বয়সন্ধিকালে যথেষ্ট খেলাধুলা করেছেন এমন কারো সাথে যৌনতায় তাল মেলানো সিজারিয়ান হওয়া, ইনএপ্রোপ্রিয়েট ব্রেস্ট ফিডিং/বটল ফিডিং করে বড় হওয়া, শারীরিকভাবে দুর্বল বাবা মায়ের সন্তান, যে কিনা বয়সন্ধিতে খেলাধুলা করতে খুব একটা আগ্রহী ছিল না, প্রায়ই সম্ভব হয় না।
দেখা যায়, শারীরিকভাবে দুর্বল বাবা মায়েরা নিজেদের নিরাপত্তাবোধের অভাব থেকে সন্তানকে কম খেলাধুলা করতে দেন, অপরপক্ষে শারীরিকভাবে শক্তিশালী বাবা মায়েরা প্রায়শই বিপরীতটা করেন। দেখবেন, যাদের বাবা শৈশবে ডানপিটে ছিলেন, তারা জীবনে খেলাধুলার সুযোগ বেশি পেয়ে থাকেন।
সেক্সুয়াল ম্যাচিউরিটিতে পৌছানোর জন্য ১৩-১৯ বছর সময়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে মানুষের মিনারেলের চাহিদা প্রায় ১.৫-২ গুন হয়ে যায় নিজের গ্রোথকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য। কিন্তু এই বয়সেই মানুষ সবচেয়ে বেশি আনহেলদি ফুড খায়, যাতে প্রায়ই বাড়তি সুগার, সোডিয়াম, ট্রান্স ফ্যাট, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট থাকে এবং অন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট কম থাকে।
আমাদের চারপাশে বিছানায় অসুখী দম্পতি এখন অনেক। এর প্রধান কারন, আমাদের লাইফস্টাইলে এখন অনেক বেশি ভ্যারিয়েবলস। বিয়ের সময় নিজেদের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট কথাবার্তা বলা হলেও যে জিনিসটার অভাবে বিয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে, সে বিষয়টা নিয়ে কথাই হয় না পাত্র পাত্রীর ভেতর। সবাই মনে করেন, ব্যাপারটা কম্প্রোমাইজেবল।
আমি যৌন অতৃপ্তি চেপে রাখতে রাখতে প্রায় মানসিক রোগী হয়ে যাওয়া প্যাশেন্ট পাই প্রায় প্রতি চেম্বার ডেতেই। ডুয়াল লাইফ লিড করতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন আমাদের চারপাশের অজস্র মানুষ।
অথচ, ফ্যামিলি প্ল্যানিং মানে শুধু টাকা পয়সার আলাপ না, ফ্যামিলি প্ল্যানিং মানে লাইফস্টাইল প্ল্যানিংও।
আপনার লাইফস্টাইল পরিবর্তনের চেষ্টায় আপনার স্বামী-স্ত্রীকেও যুক্ত করুন। মানসিকতা বদলালে বদলে যাবে অনেক কিছুই।