Top

বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে চলা একটা ভুল ধারনা- “মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় শারীরিক পরিশ্রম করে না”

Sajal’s Diet Falsafa / Muscle, Strength, Stamina and Performance  / বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে চলা একটা ভুল ধারনা- “মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় শারীরিক পরিশ্রম করে না”

বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে চলা একটা ভুল ধারনা- “মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় শারীরিক পরিশ্রম করে না”

এই কথাটা এখন অচল। কেন অচল, আসেন বুঝি।

একজন ৫৫ কেজি ওজনের মেয়ের শরীরে গড়ে মাসল মাস থাকে ১৮ কেজি। এর মধ্যে হয়তো ভলান্টারি মাসল থাকবে ১২.৫ কেজি। আমি এভারেজদের কথা বলছি।

ছেলেদের ক্ষেত্রে, ব্যাপারটা এমন না। ছেলেদের ক্ষেত্রে এভারেজ ৭০ কেজি ওজনে ভলান্টারি মাসল থাকবে ২৫ কেজি।

তার মানে, আমরা শুরুই করি মেয়েদের ডাবল ভলান্টারি মাসল নিয়ে। দৌড়াদৌড়ি, বন্ধুদের সাথে মারামারি ধাক্কাধাক্কি করে এই মাসল আরো ডেন্স হয়। গায়ের জোর আরো বাড়ে।

মেয়েদের উলটা। তারা মারামারি কম করে, দৌড়ায় আরো কম। সামাজিকভাবেই দৌড়ের ওপর রেস্ট্রিকশন আছে। দু চারটা বাদে তাদের খেলাগুলো খুব বেশি মোবাইল না, আইমিন বেশি মুভ করতে হয় কম। ফলে মাসল হয় লুজ।

প্লাস, উই হ্যাভ দ্যা গেইম চেঞ্জার, টেস্টোস্টেরন। একারনে আমাদের মাসল লস কম হয়, আমাদের বোন্স অনেক বেশি শক্ত হয়।

শেষমেশ আমাদের সাথে তাদের ভলান্টারি মাসল মাস যদি কম্পেয়ার করা হয়, তারা অন্তত ৩ঃ১ এ পিছিয়ে থাকবে।

খেয়াল করলে দেখা যাবে, গায়ের জোরে আমাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হওয়ার পরেও তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে, বিশেষভাবে বিয়ের পরে।

বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো একটা বিশাল পরিশ্রমের কাজ। বাচ্চাকে সারাদিন কোলে নেয়া, আরেকটা পরিশ্রমের কাজ। সারাদিন এটা ওটা ঝাড়া মোছা করতে, কাপড় ধুতে, বাসন মাজতে, মাছ তরকারি কুটতে বেশ অনেকটা শারীরিক পরিশ্রম হয়ে যায়।

তাদের ঐ দুর্বল মাসল একসাথে অনেকখানি প্রেসার না নিলেও ধীরে ধীরে প্রেসার নিতেই থাকে, নিতেই থাকে। একারনে স্বাভাবিকের চেয়ে তাদের শরীর হাত পা বেশি ব্যথা হয়। তাদের কাজগুলো স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ না, এক রকম লো ইনটেন্সিটি এনডিউরেন্স এক্সারসাইজ।

যারা ঘরের কাজ করেন না তাদের কথা আজকে বলছি না। যারা করেন তাদের কথা বলছি।

এখন আর শহরের পুরুষরা কাজের ক্ষেত্রে কোন শারীরিক পরিশ্রম করে না। আমাদের কাজগুলো প্রায় সবই মানসিক দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।

সব মিলিয়ে, ভলান্টারি মাসল মাস যদি আমরা হিসাব করি তাহলে দেখা যাবে, শহরের একজন মধ্যবিত্ত গৃহিনী তার স্বামীর চেয়ে পার কেজি মাসল মাস অন্তত চার থেকে ছয়গুন বেশি শারীরিক পরিশ্রম করছেন।

কিন্তু, তারা কখনো বাসার ভাল প্রোটিনটা খান না। সাধারনত সবাইকে দিয়ে তারপর নিজে খান। ফলে তাদের মাসল ডিগ্রেডেশনও সময়ের সাথে সাথে বেশি হয়।

এই দুর্বল মাসলের কারনে শেষমেশ অল্প বয়সেই কোমর আর হাটুতে ব্যথা শুরু হয়।

ওদিকে, পুরুষদের কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম হচ্ছে না। কিন্তু পুরুষের শারীরিক পরিশ্রম না করলে পৌরুষে ভাটা পড়ে। চেহারায় দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে, চর্বি বেশি উৎপন্ন হয়, টেস্টোস্টেরন লেভেল কমে। ফলে বোন লস হয়, মাসল লস হয়।

এজন্য, আমাদের উচিত, মেয়েদের ঘরের ভাল প্রোটিনগুলো খেতে দেয়া। তাদের খুব বেশি খেতে হয় না, ভাল কোয়ালিটির প্রোটিন একজন পুরুষের চেয়ে কিছুটা কম খেলেও তারা ভাল থাকতে পারে।

আপনার স্ত্রীকে দিনে দুটো ডিম খাওয়ান, একদিন পর একদিন একটা বড় মাছের টুকরো খেতে দেন, মুরগী-গরুর কলিজা বাসায় থাকলে তাদের সবার পরে না, আপনার সাথে সাথেই খেতে বসান, বকা দিয়ে হলেও খাওয়ান।

নিয়মিত ভিটামিন সি খাওয়াবেন, ডি খাওয়াবেন। মেইনটেন্যান্স ডোজ ১ গ্রাম ও ২০০০ আইইউ। দেখবেন আপনার স্ত্রী ভাল থাকবে।

আমাদের নজর দেয়া উচিত এখন যে মেয়েগুলি বড় হচ্ছে তাদের দিকেও। এরা ওজন নিয়ন্ত্রনের নামে ক্র‍্যাশ ডায়েটের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ঢুকে একেকটা জ্যান্ত লাশে পরিনত হচ্ছে, আর নয়তো ফাস্টফুড খেয়ে, নড়াচড়া না করে গোলগাল কুমড়োয় পরিনত হচ্ছে।

তাদেরকে বাড়তি আহ্লাদ না করে ভালোভাবে বোঝাতে হবে, তাতে কাজ না হলে এদের চারপাশ থেকে যাবতীয় বাজে খাবার এবং বাড়তি টাকা সরিয়ে ফেলতে হবে।

চকোলেট, আইসক্রিম, পিৎজা, পাস্তা বাদ দিয়ে তাদের ডিম বা মাশরুমের ডিশ করে খাওয়া শেখান। ১০-১২ বছর বয়স থেকে অল্প অল্প ওয়েট তোলার অভ্যাস করান। ২-৩ কেজি দিয়ে শুরু করে বয়স ১৮-২০ হলে ১৫ কেজি ওয়েট তোলার অভ্যাস করান দিনে ১০-১২ বার। সাথে দিনে ১টা ৬০০ আইইউ ভিটামিন ডি দেন।

মেয়েদের প্রোটিন খাওয়া একেবারে ফরজ, কারন তারা পার কেজি ভলান্টারি মাসলে আমাদের চেয়ে বেশি কাজ করে। তার পুষ্টির দিকে নজর দিন, সে সুস্থ থাকলে আপনার পরিবার সুস্থ থাকবে। তার মন ভাল থাকবে, সে আপনার মন ভাল রাখতে পারবে।

আমাদের কাছে আসবেন সমস্যা হলে। কিন্তু তার আগে, একটু বাড়তি যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে দেখেন না। ডাক্তার-পুষ্টিবিদের আয় হোক বা না হোক, আমাদের মেয়েরা ভাল থাকবে।

Share
admin