ফ্যাটি লিভার এমন কোন রোগ না, যেটা একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় আটকে থাকবে
এটার কারন, লিভার হচ্ছে আমাদের শরীরের সেই অঙ্গ, যা মূলত আমাদের শরীরের পুষ্টিকনাগুলোকে নিজের ভেতর জমা করে এবং বিভিন্ন অঙ্গে, টিস্যুতে ও কোষে পাঠায়।
একারনে, লিভারে যখন ফ্যাট (যার প্রধান অংশ হচ্ছে ট্রাইগ্লিসারাইডস) জমে, তখন আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশে লিভার ফ্যাট পাঠাতে শুরু করে।
এই ঘটনার প্রথম ভুক্তভোগী হচ্ছে আমাদের গলব্লাডার। আমরা জানি, গলব্লাডারে জমা হওয়া বাইল বা পিত্তরসের প্রধান কাজ হচ্ছে ফ্যাট গলিয়ে ফ্যাট হজম করতে সাহায্য করা। ফ্যাটি লিভার সাধারনত প্রয়োজন অনুযায়ী পিত্তরস বা বাইল উৎপাদনে ব্যর্থ হয়, যার ফলে বাড়তি কোলেস্টেরল গল ব্লাডারের পক্ষে পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।(1)
এখন আপনার পিত্তথলির মধ্যে যখন ইনফ্ল্যামেশান হবে, তখন সেখানে লিভার ফ্যাট পাঠাবে। সেই ফ্যাট পিত্তথলির ভেতর জমাট বাধলে যে পাথর হয় তাকে আমরা বলি কোলেলিথিওসিস। এগুলি মূলত কোলেস্টেরল থেকে তৈরি পাথর।
আবার, ধরেন লিভার ফ্যাট তৈরি করছে, পাশাপাশি আপনি কিছুটা স্ট্রেসে আছেন বা আপনার শরীরে সাব ক্লিনিক্যাল লেভেলের ইনফ্ল্যামেশান আছে। লিভার তখন ট্রাইগ্লিসারাইডস বা চর্বি আপনার ব্লাডে ছেড়ে দেবে, যাতে আপনার ব্লাড ভেসেলগুলো নিজেদের মেরামত করে নেয়।(2)
অর্থাৎ, ফ্যাটি লিভার থেকে আপনার ব্লাডে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, যা হৃদরোগের ঝুকি বাড়িয়ে তোলে।
লিভারে জমা বা লিভারে তৈরি হওয়া বাড়তি ফ্যাট কিন্তু আমাদের শরীরের যেসব আনন্যাচারাল প্রো ইনফ্ল্যামাটরি সেল আছে, লাইক সিস্ট, টিউমার, ফাইব্রয়েডস এবং ক্যান্সার সেল, তাদের বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এর ফলে, আমাদের কিডনি, প্যানক্রিয়াস, ওভারি ও ইউটেরাসের মত অঙ্গগুলিতে সিস্ট তৈরির সম্ভাবনা বাড়ে। (এটাকে ওভারিয়ান সিস্টের সাথে মিলিয়ে না ফেলাই ভাল হবে) প্যানক্রিয়াসে যখন ফ্যস্ট জমতে শুরু করে, তখন প্যানক্রিয়াটিক সেল ড্যামেজ শুরু হয়, এবং প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন সিক্রেশনের ক্ষমতা সীমিত হতে শুরু করে, যা ভবিষ্যতে ডায়বেটিসে গড়াতে পারে।
এমনকি, অ্যালঝেইমার্সের মত রোগও অনেক সময় দানা বাধে ফ্যাটি লিভার থেকে(ডেফিনিটলি এটা অ্যালঝেইমার্সের প্রধান কারন নয়)।
তাহলে, আমরা দেখছি, ফ্যাটি লিভার আসলে শুধু লিভারে সীমাবদ্ধ থাকে না। ফ্যাটি লিভার আসলে অন্যান্য অনেক মেটাবলিক ডিজিজের নেপথ্যের কারন হয়ে দাঁড়ায়।