ফ্যাটি লিভার থেকে বেরিয়ে আসতে যেসব খাবার গুরুত্বপূর্ণ
ফ্যাটি লিভার রোগটাকে অনেকে পাত্তাই দিতে চান না। কিন্তু আমার মতে, ফ্যাটি লিভার হচ্ছে সমস্ত মেটাবলিক ডিজিজ(টাইপ টু ডায়বেটিস, সিভিডি, গলস্টোন, স্ট্রোক) এর গেটওয়ে। এই রোগগুলিতে আসতে হলে, ফ্যাটি লিভারের পথ ধরেই সাধারনত আসতে হয়, আই মিন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগগুলি ফ্যাটি লিভার থেকেই শুরু হয়।
গ্রেড ওয়ান ফ্যাটি লিভার থেকে সুস্থ হওয়া খুবই সহজ, ইভেন গ্রেড টু থেকেও সহজেই সুস্থ হওয়া যায় মাত্র কয়েক মাসেই। কিন্তু গ্রেড থ্রি তে চলে গেলে ফেরত আসতে অনেক সময় মেডিকেশন প্রয়োজন হয়, আর লাইফস্টাইল মোডিফিকেশান তো আছেই। গ্রেড থ্রি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আসার পথে আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই সময় স্টিয়াটোসিস হয়ে লিভারের অনেক অংশ ড্যামেজড হয়ে যায়, যা কোন কোন ক্ষেত্রে আর নিজেকে রিজেনারেট করতে পারে না।
যাদের ফ্যাটি লিভার আছে, তাদের জন্য আমি এখন কিছু খাবারের কথা বলবো, যা ন্যাচারালি এই রোগ থেকে বেরিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।
১) ফুলকপি-বাধাকপি-ব্রক্কোলিঃ এই তিনটা ক্রুসিফেরাস ভেজিটেবল ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলোতে কার্বোহাইড্রেট যেমন কম, (৫-৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট প্রতি ১০০ গ্রামে) তেমনি আছে তিনটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। ১)ডাই ইন্ডোল মিথেন, ২)ইনডোল-৩ কার্বিনল ও ৩)সালফোরাপ্রেন
এই তিনটা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টই লিভারকে প্রটেক্ট করে। প্রথম দুটোর কাজ হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমানো, বাড়তি ফ্যাট তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সংকেত দেয়া আর তৃতীয়টার কাজ হচ্ছে বাড়তি ফ্যাট জমার মূল কারন যে ইনফ্ল্যামেশান, সেটাকে দূর করা।
২) সরিষাঃ আমরা ওপরে যে ভেজিটেবলসগুলার কথা বললাম, সেগুলির সালফোরাপ্রেন অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায় রান্না করলে। এটাকে আবার কাভার দেয়া যায় সরিষা দিয়ে। কাসুন্দি-সরিষাবাটায় প্রচুর তাজা সালফোরাপ্রেন থাকে, গরম গরম সবজিতে কাসুন্দি-সরিষাবাটা ব্যবহার করলে তা ফ্যাটি লিভার প্যাশেন্টদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।
৩) লেবুঃ লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং বিটা ক্রিপ্টোজ্যানথিন, জিয়াজ্যানথিন, রুটিন ও নারনিনজেনিন লিভার ডিটক্সের জন্য খুবই কার্যকর। তবে ভিটামিন সি’র জন্য না, লেবুর বিটা ক্রিপ্টোজ্যানথিনই মূলত লিভারের জন্য উপকারী। ভিটামিন সি’র থেরাপিউটিক ইফেক্ট পেতে হলে হয় আমলকি, আর নয় এসকরবিক এসিড পাউডার প্রয়োজন হয়।
৪) রসুনঃ রসুনের প্রধান ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এলিসিন, এটা অত্যন্ত শক্তিশালী এন্টি ইনফ্ল্যামাটরি কম্পাউন্ড, ইভেন নিকোটিনের ইনফ্ল্যামেশানকে থেরাপিউটিক ডোজে ঠেকাতে সক্ষম। রসুনের এলিসিনের সাথে আরেকটা সুবিধা হচ্ছে ভিটামিন বি-১, এলিথাইমিন রুপে থাকে রসুনে। ফ্যাটি লিভার ডিজিজে যারা ভোগেন তাদের মাইটোকন্ড্রিয়া শক্তি উৎপাদন করে কম, এলিথাইমিন এক্ষেত্রে তাদের জন্য উপকারী।
৫) হলুদঃ হলুদ হচ্ছে সালফারের আরেক কারখানা। সাথে আছে বিখ্যাত এন্টি ইনফ্ল্যামাটরি মলিকিউল কারকিউমিন। এটাও লিভারে ইনফ্ল্যামেশান কমাতে শক্তিশালী ভুমিকা রাখে। বিশেষভাবে কাচি হলুদ কুচি করে খাওয়া সবচে ভাল ফল দিতে সক্ষম।
৬) ইলিশ মাছ-দেশী মাছের মধ্যে সর্বোচ্চ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এবং সবচেয়ে শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট মলিকিউলগুলোর একটা-এস্টাজ্যানথিন ইলিশ মাছের তেলে পাওয়া যায়। একশো গ্রাম ইলিশ মাছে প্রায় ৯২৫ আইইউ ভিটামিন ই থাকে আলফা টোকোফেরল ফর্মে, বুঝতেই পারছেন, ইলিশ মাছ লিভার ইনফ্ল্যামেশনের জন্য খুবই ভাল।
৭) অয়েস্টার মাশরুমঃ অয়েস্টার মাশরুম গ্লুটাথায়োনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক উৎস। আমরা শরীরের মাস্টার এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে জানি গ্লুটাথায়োনকে। এছাড়া অয়েস্টার মাশরুমে থাকা ভিটামিন ই ও ভিটামিন কের কম্বিনেশন আমাদের লিভারকে ডিটক্সিফাই করে, ইনফ্ল্যামেশান কমায় এবং নতুন লিভার সেল রিজেনারেট করতে শরীরকে সংকেত দেয়।
৮) এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলঃ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল এন্টি ইনফ্ল্যামাটরি। এর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ানো। ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়লে শরীর নিজ থেকেই ফ্যাট তৈরি করা কমিয়ে দেয় এবং ফ্যাট বার্ন করা বাড়ায়।
একারনে, যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত, তাদের উচিত এই খাবারগুলো নিজেদের ডায়েটে যোগ করে নেয়া।
ফ্যাটি লিভার যদি আমরা প্রতিরোধ করতে পারি, অন্য অনেক রোগ থেকে আমরা এমনিতেই মুক্ত থাকবো ইনশা আল্লাহ।