সবার জন্য একই ডায়েট চার্ট ও সাপ্লিমেন্টেশন প্রযোজ্য কি?
আমি গ্রুপে সরাসরি ডায়েট প্ল্যান শেয়ার এবং সাপ্লিমেন্টের ডোজ রিকমেন্ড করার বিরোধী। একই সাথে, আমি ভিডিও দেখে ডায়েট শুরু করে দেয়ারও বিরোধী।
গ্রুপ থেকে আমরা ইনফরমেশন শেয়ারিং এবং নিজ ডায়েট প্ল্যান ডেভেলপমেন্টের জন্য পরামর্শ দিতে পারি কিন্তু ডোজ বা পরিমান বলে দেয়ার ফলে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
১) ডায়েট দেয়ার আগে প্রথমে প্রয়োজন ক্লিনিক্যাল এসেসমেন্ট-ডায়গনোসিস-ইনভেস্টিগেশন। আমার ক্লিনিক্যাল নলেজ-এক্সপেরিয়েন্স বলে, চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে রোগ ও রোগের গোড়ার কারন ধরতে পারা। ইভেন সামনাসামনি প্যাশেন্ট দেখেও অনেক সময় ২-৩ ভিজিটের আগে রোগের কারন ধরা সম্ভব হয়ে ওঠে না, এটা বেশিরভাগ প্র্যাক্টিশনাররাই জানেন, কিন্তু স্বীকার করতে চান না পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে। কিন্তু অনলাইন কালচার আমাদের মধ্যে একটা সবজান্তা ভাব নিয়ে এসেছে, দেখা যাচ্ছে রোগীকে যথাযথ এসেসমেন্ট-ইনভেস্টিগেশান না করেই আমরা পরামর্শ দিয়ে ফেলছি। এটা করতে হচ্ছে কিছু ক্লু আর অনুমানের ওপরে। এই অনুমান কাজ করতেও পারে, নাও করতে পারে। যদি এতে লাভ হয় তো রোগীর উপকার হল, কিন্তু যদি এই অনুমানভিত্তিক এসেসমেন্ট ভুল হয়, দায়টা গ্রুপের ওপর এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর এসে পড়বে৷ এখন কারো যদি কোন ক্ষতি হয়, এর দায় দায়িত্ব কিন্তু অনলাইনে কোন পদ্ধতিগত শিক্ষা ছাড়াই পরামর্শ দেয়া ব্যক্তিটি স্বাভাবিকভাবেই নেবেন না। ফেইসবুক-ইউটিউব থেকে পরামর্শ নেয়ার সবচেয়ে বড় বিপদ, ডায়গনোসিস করার যথাযথ সুযোগ এখানে নেই, মানে চিকিৎসার সবচেয়ে দরকারী অংশটাই মিসিং।
২) সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা অনেকেই বলেন, কিন্তু সিস্টেমের বিরুদ্ধে অলটারনেটিভ ট্রিটমেন্টের কথা বলা আর অলটারনেটিভ ট্রিটমেন্টের স্টেপ বাই স্টেপ মেকানিজম, ডিজিজ প্যাথোফিজিওলজি, নিউট্রিশন ও ড্রাগ-নিউট্রিয়েন্ট ইন্টারএকশন জানা পুরোপুরি ভিন্ন বিষয়। কোন একজন ব্যক্তি সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলছেন মানেই যে তিনি সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় ভালভাবে জানবেন বিষয়টা তা নাও হতে পারে।
৩) প্রতিটা মানুষের জেনেটিক প্রোফাইল যেমন আলাদা, তেমনি আলাদা ক্লিনিক্যাল প্রোফাইলও। যারা প্র্যাক্টিস করছে তাদের সাথে কথা বললে আরো ভালো বুঝবেন, একই ডায়েট ফরমুলা প্রায়শই দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করে। কিছু জেনেরিক সাজেশান সবাইকেই দেয়া যায়, কিন্তু কোন সিঙ্গল সাজেশানই সবাইকে দেয়া যায় না, কারন সব শরীর একই উপায়ে চলে না। বাংলাদেশে আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে অনেকেই আয়রন টক্সিসিটিতে ভোগেন, আবার অনেকের এনিমিয়া ঠিক হয়ে যায়। কারন কি?? ক্লিনিক্যাল প্রোফাইল আলাদা থাকা। ক্যালসিয়াম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাড়ের ব্যথায় লাগে না, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে লাগেও। কারন কি?? ক্লিনিক্যাল প্রোফাইল আলাদা থাকা।
এই সমস্ত ব্যাপার বিচার বিবেচনা না করে সর্বোচ্চ জেনেরিক সাজেশান দেয়া যেতে পারে, কিন্তু সাপ্লিমেন্ট ডোজ বা ডায়েট প্ল্যান দেয়াটা গ্রুপের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
এই বিষয়ে আমি সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানাচ্ছি।
সবাই ভাল থাকবেন। শুকরিয়া।