Top

অনিদ্রা হতে পারে ডায়াবেটিসের কারণ

Sajal’s Diet Falsafa / Diabetes  / অনিদ্রা হতে পারে ডায়াবেটিসের কারণ

অনিদ্রা হতে পারে ডায়াবেটিসের কারণ

আজ পর্যন্ত গত তিন-চার বছরে যত ডায়বেটিক প্যাশেন্টের সাথে কথা হয়েছে সবাই জানিয়েছেন, অতীতে তাদের ঘুমের সমস্যা ছিল।

এই সমস্যার সাথে আমাদের কিছু কাজের সরাসরি সম্পর্ক আছে। আমাদের চারপাশে থাকা হাজার হাজার মানুষের ইনসমনিয়া ও সেমি ইনসমনিয়ার প্রধান কারন আধুনিক জীবনযাত্রা। আধুনিকতা যে অনিদ্রার মহামারী ডেকে এনেছে তা ক্রমেই আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ডেকে আনছে স্ট্রেস এবং ডায়বেটিস।

অনিদ্রা কিভাবে ডায়বেটিসের একটা লক্ষণ হতে পারে??

উত্তরটা লুকিয়ে আছে-ঘুমানো আর জেগে থাকার যে হরমোনাল রেগুলেশন তার ভেতর।

ভোরবেলা ও বিকেলবেলা আমাদের শরীরে ইনসুলিন সিক্রেশন বেশি হয়। এই দুইটা সময় তাই খাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। খেয়াল করে দেখবেন, সমস্ত স্তন্যপায়ী শিকারীরা এই সময়ে শিকার করে।

এই সময়ে শিকার করার একটা কারন হচ্ছে, আলো-আধারীর ভেতর নিজেকে সহজে লুকিয়ে রাখা যায়, আর অন্য কারনটা হচ্ছে, প্রাকৃতিকভাবে খাবার হজমের সেরা সময় হচ্ছে ভোর ও সন্ধ্যা/বিকেল।

মানুষ ইতিহাসের বড় একটা সময় শিকারী ছিল, তাই মানুষের পিক ইনসুলিন সিক্রেশানটা হয় শিকারী প্রানীদের মতই ভোরে ও সন্ধ্যায়।

এই সময়টায় আমাদের কাজ হচ্ছে এমন খাবার খাওয়া যা খেলে ইনসুলিনটা স্বাভাবিকভাবে তার কাজ শেষ করতে পারে।

কিন্তু আমরা কি করি, আমরা সকালের খাবার খাই অনেক দেরিতে, আর সন্ধ্যার খাবার খাই আরো পরে, তারপর দেখা যায় রাতে একটা হেভি ডিনার মেরেও বসে থাকি।

আমাদের যাবতীয় খানাপিনার অনুষ্ঠান হয় রাতে, অফিস পার্টি, দাওয়াত সবই রাতে।

কিন্তু, আমার শরীর তো রাতে খাওয়ার জন্য তৈরি না।

সন্ধ্যার একটু পর থেকে শরীরের ভেতর নামে ঘুমের হরমোন, নাম তার মেলাটোনিন। রাত ৯টায় এটা সর্বোচ্চ পরিমানে সিক্রেটেড হয়, আর এটাই হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়ার সেরা সময়।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আধুনিক মানুষ ঘুমাচ্ছে রাত ১২টা-৩টায়।

সে খাচ্ছে রাত ১০টা-১২টা পর্যন্ত,  যা আসলে কোন দিবাচর প্রানীই করে না।

তার চোখের সামনে থাকছে উজ্জ্বল নীলাভ সাদা আলো বা সাদা আলো, যা মেলাটোনিন সিক্রেশনে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে।

রাতের খাবারের বাড়তি সুগার তার রক্তে ইনসুলিনকে ফিরে আসতে বাধ্য করছে অসময়ে, আর ইনসুলিন মেলাটোনিনকে স্বাভাবিক মাত্রায় বের হওয়া থেকে বাধা দিয়ে রাখছে পরের প্রায় ৩-৪ ঘন্টা পর্যন্ত।

এই যে অসময়ে বের হওয়া ইনসুলিন, এটা আমাদের স্বাভাবিক শারীরিক চক্রকে ব্যাহত করে যাচ্ছে প্রতিদিন। ফলে আমরা ক্রমেই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হচ্ছি, পাশাপাশি আমাদের মেলাটোনিন সিক্রেশন হচ্ছে গভীর রাতে।

ফলে আমাদের ঘুম আর আমরা শেষ করতে পারছি না কারন সকাল হলে তো আবার বাইরে বেরোতে হবে। সারাদিন ঘুম ঘুম লাগছে, আবার খাচ্ছি দিনের বেলা, সেই সুগার রক্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

প্রায় প্রতিদিনই অসমাপ্ত ঘুম বছরের পর বছর ধরে কর্টিসোল লেভেলকে ওপরে তুলে রাখছে, ফলে আবার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে।

ওদিকে সকালে আবার যথেষ্ট ইনসুলিন সিক্রেশন হচ্ছে না সাইকেল ঠিকভাবে কাজ না করায়।

অর্থাৎ শুধু সঠিক সময়ে ঘুম না হওয়ায়ঃ

১) মেলাটোনিন দেরিতে বের হচ্ছে

২) ইনসুলিন অসময়ে বের হচ্ছে/বের না হলে রক্ত্র গ্লুকোজ থেকে যাচ্ছে

৩) কর্টিসোল বেড়ে যাচ্ছে

৪) ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে

এই যে বিপর্যস্ত ইনসুলিন-মেলাটোনিন চক্র, এর অবশ্যম্ভাবী ফল হল ডায়বেটিস।

আধুনিকতা যে অনিদ্রার মহামারী আমাদের উপহার দিয়েছে তা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারা হু হু করে ডায়বেটিস রোগী বাড়ার অন্যতম কী ফ্যাক্টর।

এটা থেকে বের হতে আমরা কি করতে পারি??

১) এশার নামাযের পর আর কিছু না খাওয়াঃ

আমরা গড়ে রাত ৮ঃ১৫ তে এশার নামায পড়ি। রাতের খাবার যদি আমরা ৭ঃ৩০ এর মধ্যে সেরে ফেলতে পারি তাহলে আমাদের ১০ঃ৩০ এর ভেতর ঘুম চলে আসবে ইনশা আল্লাহ। সবচেয়ে ভাল হয় মাগরিবের পর আর কিছু না খেলে।

২) সন্ধ্যার পর যাবতীয় কাজ রাত ৮টার ভেতর সেরে ফেলা এবং ৯টার ভেতর চারপাশের সমস্ত আলো বন্ধ করে ফেলা। আলো বন্ধ থাকলে অপেক্ষাকৃত সহজে মেলাটোনিন সিক্রেশন হবে।

৩) বিকেল ৩টার পর মোবাইল আর চার্জে না দেয়া, যার ফলে রাত ৯টার ভেতর এমনিতেই চার্জ শেষ হয়ে যাবে। তারপর ফোন চার্জ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া সহজ হবে।

৪) রাতের বেলার মিটিং-সিটিং-চ্যাটিং সীমিত করে আনা

৫) সামাজিক কোন আয়োজনে সন্ধ্যার পরে না যাওয়া। এটা একটা অন্যতম কারন যার ফলে আমরা সন্ধ্যার পর খেয়ে রাত করে বাসায় ফিরি।

৬) এমন একটা বন্ধু-প্রতিবেশী-কলিগদের গ্রুপ তৈরি করা যারা রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে চান। এই চক্রটা আপনাকে দ্রুত ঘুমোতে অনেক বেশি সহায়তা করবে।

৭) নিয়মিত ফজর পড়তে সচেষ্ট হওয়া এবং দিনের প্রথম খাবারটা যথাসম্ভব সকালে খাওয়া।

৮) রাতে যদি একান্তই খেতে হয় তবে চিনি-মিষ্টি-কার্বস না খাওয়া। সম্ভব হলে সবজি/সালাদ অথবা স্যাচুরেটেড ফ্যাটস খাওয়া প্রয়োজন। এতে করে গভীর রাতে খিদে পাওয়ার সমস্যা দূর হবে ইনশা আল্লাহ।

এই চর্চাগুলো যদি আমরা ঠিকভাবে করি তাহলে আমাদের পক্ষে নিজেদের অনিদ্রা ও এসংক্রান্ত ডায়বেটিসের মহামারী অনেকটাই কমবে বলে আমি মনে করি।

Share
admin