প্রেগন্যান্সির শুরুতে কত কেজি ওজন থাকা ভালো? কার কত কেজি ওয়েট গেইন করা উচিত?
প্রেগন্যান্সির শুরুতে কত কেজি ওজন থাকা ভালো এবং কার কত কেজি ওয়েট গেইন করা উচিত, এটা নিয়ে নানা মুনির নানা মত এবং বহু অবৈজ্ঞানিক মতও বাজারে চালু আছে।
আমি এখানে আমেরিকান নিউট্রিশন এসোসিয়েশান, ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেম ইউকে, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ (আমেরিকা) এবং ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এই চারটি প্রতিষ্ঠানের মত ও আমার ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিয়েন্সের সামারি তুলে ধরবো।
১) ৫ ফুট ১ ইঞ্চি পর্যন্ত মায়ের উচ্চতা যত ইঞ্চি, ওজন হতে হবে তার ৪ ভাগের ৩ ভাগের কাছাকাছি। ৫ ফুট উচ্চতার ওজনের একজন মায়ের ওজন প্রেগন্যান্সির শুরুতে থাকা উচিত ৪৫ কেজির আশেপাশে। ৫ ফুটের ওপরে প্রতি ১ ইঞ্চি উচ্চতার জন্য ২.৫ কেজি বাড়তি ওজন যোগ হবে। অর্থাৎ কারো উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হলে তার আইডিয়াল প্রি প্রেগন্যান্সি বডি ওয়েট হওয়া উচিত ৬০ কেজি। এর সাথে আমরা +/-৬ কেজি ধরতে পারি। আই মিন আদর্শ ওজনের ৬ কেজি কম ও বেশি হতে পারে। (1)
২) সর্বনিম্ন কত ওজনে প্রেগন্যান্সিতে গেলে তা ঝুকিমুক্ত হবে এটা নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট সীমানা নেই, যা আছে তা বিএমআই ভিত্তিক মত, সব জায়গায় খাটে না। ৫ ফুট উচ্চতার মধ্যে সর্বনিম্ন ৩৮ কেজি ওজন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর নিচে গেলে তা মা ও শিশুর জন্য ঝুকিপূর্ণ। এর ওপরে প্রতি ১ ইঞ্চি উচ্চতার জন্য ১.৬ কেজি করে বাড়িয়ে ধরতে হবে। ৫.৫ ইঞ্চি উচ্চতায় লোয়ার লিমিট ৪৬ কেজি। আবার বলছি, এর কোন ধরাবাধা সীমানা নেই। শুধু আমরা এটুকু জানি যে এর নিচে ঝুকির হার বেশি থাকে। এর মানে এই না যে এর নিচের ওজনে কেউ সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারবেন না।
৩) সর্বোচ্চ নিরাপদ ওজন কত হওয়া উচিত এর সীমা বিএমআই দিয়ে সহজেই বের করা যায়। বিএমআই ৩০ এর ওপরে হলে তা খুবই ঝুকিপূর্ণ প্রেগন্যান্সি বলে ধরে নেয়া হয়। ৫ ফুট উচ্চতায় ৬৭.৫ কেজির ওপরে সমস্ত প্রেগন্যান্সি ঝুকিপূর্ন। এর ওপরে প্রতি ইঞ্চি উচ্চতার জন্য ৪.৫ কেজি করে যোগ করবেন। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির মায়ের জন্য সীমা হচ্ছে ৭৭.৫ কেজি। তবে বাস্তবে বিএমআই ২৪ এর ওপরে হলেই মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। (2)
৪) ওজনের চেয়ে কোমর এবং নিতম্বের মাপের অনুপাত তথা ওয়েস্ট টু হিপ রেশিও এক্ষেত্রে অনেক শক্তিশালী রিস্ক প্রেডিক্টর। যিনি প্রেগন্যান্সিতে যাচ্ছেন তার কোমর ও নিতম্বের মাপের অনুপাত হওয়া উচিত .৭৫ এর নিচে। ধরা যাক কারো ওয়েস্টের সবচেয়ে সরু অংশের মাপ ২৮ ইঞ্চি এবং হিপের সবচেয়ে চওড়া অংশের মাপ ৩৭ ইঞ্চি। তাহলে, তার জন্য প্রেগন্যান্সি নিরাপদ, কোমরের মাপ এরচেয়ে বেশি হলে প্রেগন্যান্সি তার জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে শুরু করবে। (3)
সহজ হিসাব হচ্ছে কোমরের মাপ হতে হবে নিতম্বের মাপের ৭৫% বা তার কম, এর বেশি অবশ্যই নয়।
৫) প্রেগন্যান্সিতে কত কেজি ওয়েট গেইন করা যাবে??
যাদের ওজন স্বাভাবিক, তারা গেইন করবেন ১২ কেজি। যাদের ওজন স্বাভাবিকের বেশি তাদের জন্য ৮-৯ কেজি যথেষ্ট, যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম(বিএমআই-১৮ এর কম) তাদের গেইন করতে হবে ১৪-১৬ কেজি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রেগন্যান্সিতে যারা মোটা তারা আরো বেশি ওয়েট গেইন করেন এবং যারা চিকন তারা গেইন করতেই চান না উলটো দেখা যায় ইটিং ডিজর্ডার হচ্ছে।
এটা নিয়েই আমাদের কাজ।
আমাদের প্রফেশনাল কনসাল্টেশনে থাকা কোন বাড়তি ওজনের প্যাশেন্টই এখন পর্যন্ত প্রেগন্যান্সিতে ১২ কেজির বেশি ওয়েট গেইন করেন নি এবং কম ওজনের প্যাশেন্টরা গড়ে ১১-১৩ কেজি ওয়েট গেইন করেছেন।
প্রেগন্যান্সিতে ওয়েট কমানো বিপজ্জনক, অতিরিক্ত ওজনের রোগীদেরকে আমরা সর্বোচ্চ ধীর গতিতে ওয়েট বাড়ানো এবং প্রথম ৬ মাসে ওয়েট ৩ কেজির বেশি না বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকি।
যদি আপনি আগামী ১-২ বছরের মধ্যে সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে আপনার উচ্চতা, ওজন, কোমর ও নিতম্বের মাপ নিন এবং হিসাব করে বের করুন, কতটুকু ওজন আপনার বাড়ানো বা কমানো উচিত।