আয়রন ট্যাবলেট খেলেই রক্তস্বল্পতা দূর হয় না!
- পুরুষদের রক্তস্বল্পতা নিয়ে এর আগে লিখেছিলাম, বলেছিলাম প্রধান কারন আসলে ধুমপান, চা-কফি এবং ভিটামিন সি’র অভাব।
আজকে লিখছি কিভাবে আমরা রক্তস্বল্পতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি তা নিয়ে।
প্রথমত, আয়রন ট্যাবলেট খেলেই রক্তস্বল্পতা দূর হয় না, এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। আপনি যত ভাল আয়রন সাপ্লিমেন্টই নেন, সর্বোচ্চ ২৮% আয়রন শরীরে শোষন হবে। গড়পড়তা আমরা ধরতে পারি ১৫% আয়রন শোষন হয়। কারন আমাদের গাটে আয়রন শোষনের আগে ক্যালসিয়াম, জিংক ও ম্যাগনেসিয়ামের সাথে আয়রনের প্রতিযোগিতা হয়। এগুলো শোষনের পর শরীর আয়রনকে শোষন করে।
এক্ষেত্রে, খেয়াল করেন আমাদের শরীরে মোট আয়রন থাকে হচ্ছে কেবলমাত্র ৩ থেকে ৪ গ্রামের মত। একজন রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির ৩ গ্রামের কাছাকাছি আয়রন থাকে। এখন যে ব্যক্তি ডেফিসিয়েন্ট, তার ডেইলি রিকোয়ারমেন্ট হচ্ছে ধরা যাক ৩০ মিলিগ্রাম। সেক্ষেত্রে ১৫% শোষন হিসাব করলে তাকে দিনে ২০০ মিলিগ্রাম আয়রন সাপ্লিমেন্ট আমাদেরকে দিতে হবে।
কিন্তু এরপরেও, দেখা যাবে সাপ্লিমেন্ট দেয়ার পরেও ৩০ মিলিগ্রাম শোষন না হওয়া খুবই সাধারন ঘটনা। এর কারন, ঐ নিউট্রিয়েন্ট টু নিউট্রিয়েন্ট কম্পিটিশন। এইজন্য, আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেতে হয় খালিপেটে(যদি না এক্সেসিভ গ্যাসের সমস্যা থাকে)।
এখন তাহলে কি করা যায়??
এই জায়গাতেই আমাদেরকে ভিটামিনে যেতে হবে। সুনির্দিষ্ট ভিটামিন সুনির্দিষ্ট মিনারেলের শোষন বাড়ায়। আয়রনের ক্ষেত্রে তিনটা ভিটামিন এই কাজে জড়িত, সাথে একটা মিনারেলও।
১) ভিটামিন সি
২) ভিটামিন বি-৯ বা ফোলেট
৩) ভিটামিন বি-১২ বা মিথাইলকোবাল্যামিন
৪) কপার
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় রোল ভিটামিন সি’র।
প্রতি ৩০ মিলিগ্রাম আয়রন শোষনকে ৪০-৪৮% পর্যন্ত বাড়াতে ভিটামিন সি প্রয়োজন হয় ৫০০ মিলিগ্রাম ডোজে।
সমস্যা হচ্ছে, সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রানীর ক্ষেত্রেই ভিটামিন সি আবার ঘনঘন পেশাবের সাথে বের হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে উপায় কি?? উপায় হচ্ছে, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি দূর করতে আমাদেরকে আয়রনের সাথে প্রতি ২ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা সময়ের ভেতরে ৫০০-১০০০ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন সি পাউডার নিতে হবে।
সাথে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ফোলেট, বি-১২ এবং কপার। কপার নিতে হয় আয়রনের ৩৩%-৫০% ডোজে।
তাহলে, সাধারনের জন্য ডোজিং কি হবে??
১) আয়রন-দিনে ২ বার করে ১৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট, খালি পেটে। নিচে দুটো স্ক্রিনশটে আমি বাংলাদেশী আয়রন সাপ্লিমেন্টের ব্র্যান্ড নেইম দিয়ে দিচ্ছি।
২) এগুলোর কোনটাতেই শোষন বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট ভিটামিন সি নেই। আমরা তাই ভিটামিন সি হিসেবে সিভিট ফোর্ট বা ভিটামিন সি পাউডার ব্যবহার করবো প্রতি ৩ ঘন্টায় ১০০০ মিলিগ্রাম।
৩) আমি ব্যক্তিগতভাবে অতি প্রয়োজন ছাড়া আয়রন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের বিরোধী কারন এটা প্রো ইনফ্ল্যামাটরি মলিকিউল। তাই আমি সবাইকে পরামর্শ দেই লাল গোশত(গরু/খাসী) বা ছোট মাছ অথবা কলিজা/গুর্দা/মগজ/ফ্যাপসা জাতীয় অর্গান মিট খেতে, কতটুকু খাবেন এটা নির্ভর করবে আপনার শরীরের ওজন, গঠন ও গাট হেলথের অবস্থার ওপর।
গড়ে ৭৫ কেজি ওজনের একজন পুরুষ যদি আয়রনের অভাবে ভোগেন তিনি প্রতিদিন ৩ বার ৩০ গ্রাম করে কলিজা/২ বার ৬০ গ্রাম করে গোশত/ ৯০ গ্রাম করে ছোট মাছ খেতে পারেন।
মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিমান বাড়বে, কারন মেয়েদের আয়রন রিকোয়ারমেন্ট পুরুষের দ্বিগুন।