টাইপ টু ডায়বেটিসে ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্টেশান
টাইপ টূ ডায়বেটিসের রোগীরা মূলত ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সিতে ভোগা শুরু করেন। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে টাইপ টু ডায়বেটিসের মূল প্রিকন্ডিশান, যেখানে ডায়বেটিসে আক্রান্ত হবার পর রোগীর রক্তে থাকা গ্লুকোজ রক্ত থেকে লিভার ও মাসল সেলের ভেতরে ঢুকতে পারে না। এখানে, যে ক্যারিয়ার প্রোটিনটি মূল ভুমিকা পালন করে তার নাম হচ্ছে টাইরোসিন কাইনেজ। টাইরোসিন কাইনেজের সক্রিয় অংশসগ্রহন ছাড়া আমাদের রক্তের গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করে না। আর টাইরোসিন কাইনেজ এক্টিভেটেড হয় মূলত ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতিতে। তাই, ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি ছাড়া আসলে আমরা গ্লুকোজ শোষন ও ব্যবহার করতে পারি না।
কোন রোগী যখন অনেকদিন যাবত ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে ভোগেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা দেয়। আবার, যারা অধিক্মাত্রায় রিফাইন্ড স্টার্চ বা সুগার গ্রহন করেন, তাদের এই গ্লুকোজ মেটাবলিজমের জন্য অপেক্ষাকৃত দ্রুত ম্যাগনেসিয়াম খরচ হয়ে যায়, যে কারনে খুব সহজে তারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ডেভেলপ করেন। এক অনু চিনি মেটাবোলাইজ করতে ৫৪টা ম্যাগনেসিয়াম পরমানু প্রয়োজন হয়।
ম্যাগনেসিয়াম শুধু কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমে না, প্রোটিন মেটাবলিজমেও সমানভাবে গুরুত্ববহন করেন। মূলত ফসফোরাইলেশন হয় এরকম যেকোন মেটাবোলিক পাথওয়েতে ম্যাগনেসিয়াম লাগেই।
ওদিকে, যারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন, তাদের শরীরে সাধারনত ইনফ্ল্যামাসোমগুলি অতিরিক্ত ক্রিয়াশীল থাকে।
এক্ষেত্রে, ইনফ্ল্যামাসোমগুলির ক্ষতিকর প্রভাব দমন করতে ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন হয়। তাই দেখা যায় ডায়বেটিক প্যাশেন্টরা বেশিরভাগ সময়েই একপ্রকার প্রচ্ছন্ন ক্লান্তিতে ভুগে থাকেন। এই ক্লান্তি মূলত সৃষ্টি হয় ম্যাগনেসিয়ামের অভাব থেকে, কারন ম্যাগনেসিয়াম ছাড়া আমাদের শরীরের যে এনার্জি কয়েন, এটিপি, সেটাও তৈরি হয় না।
সোজা কথা, ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্টেশান ডায়বেটিস ম্যানেজমেন্টের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্বাভাবিক মানুষদের চেয়ে ডায়বেটিক বা প্রি ডায়বেটিক প্যাশেন্টরা সহজে ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহার করতে পারেন।
বিগত ষাট বছরে মাটির টপ সয়েল ধুয়ে যাওয়ার কারনে আমাদের শাকসবজি ও ফলে আগের চেয়ে প্রায় ২০-৩০% কম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। কীটনাশক ও সার ব্যবহারের কারনে শস্যেও এখন ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় খুবই কম। এই সবকিছু মিলিয়ে ম্যাগনেসিয়াম এখন খাবার থেকে পাওয়া কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে বলেই ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি এত বেশি চোখে পড়ছে।
ডায়বেটিক প্যাশেন্টরা কিভাবে ম্যাগনেসিয়াম নেবেন??
খাবারের মাধ্যমে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় পালংশাক, মিষ্টি কুমড়োর বীজ, কাঠবাদাম, কোকোয়া পাউডার, ঝিনুকের গোশত, ছোট মাছ ইত্যাদি থেকে। বেশিরভাগ সবুজ শাকই ম্যাগনেসিয়ামের ভাল উৎস কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে শাকের ম্যাগনেসিয়াম রান্নার সময় বাষ্প হয়ে প্রায়ই উড়ে যায় কারন ম্যাগনেসিয়াম অনেকাংশে উদ্বায়ী। খাবারের মাধ্যমে ম্যাগনেসিয়াম পাবার সেরা উপায় হচ্ছে কাঠবাদাম ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ অল্প আচে ভেজে খাওয়া।
সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ম্যাগনেসিয়াম নিতে চাইলে নিতে হবে ভাল ব্র্যান্ডের ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট। লাইফ এক্সটেনশন, নাউ, মেটাজেনিক্স হচ্ছে ম্যাগনেসিয়ামের সবচেয়ে ভাল ব্র্যান্ড। এসব ব্র্যান্ডের ম্যাগনেসিয়াম নেয়া যেতে পারে দিনে ৫০০-১০০০ মিলিগ্রাম, তবে যাদের একাধিক শারীরিক জটিলতা আছে তাদের জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়াই ভাল।