Top

সিম্যাগ বেবি: সাক্সেস স্টোরি – ০৯

Sajal’s Diet Falsafa / CMag Baby  / সিম্যাগ বেবি: সাক্সেস স্টোরি – ০৯

সিম্যাগ বেবি: সাক্সেস স্টোরি – ০৯

প্রেগন্যান্সির ২৬ সপ্তাহের মাথায় চেম্বারে এলেন সাদিয়া আপা, স্বামী স্ত্রী দুজনেই ডায়বেটিক, এটা ছিল ওনার তৃতীয় প্রেগন্যান্সি। সাদিয়া আপা পেশায় একজন ব্যারিস্টার, বয়স ৩৪।

প্রাথমিকভাবে ওনার সমস্যা ছিল, ইনসুলিন ছাড়া সুগার নিয়ন্ত্রনে আনতে না পারা। টিপিক্যাল ৫-৬ বেলা খাওয়ার ডায়বেটিক ডায়েট প্ল্যানে থেকে দিনকে দিন সুগারের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপই হচ্ছিল।

এছাড়া, সাদিয়া আপা চাচ্ছিলেন সিম্যাগ বেবি নিতে। আমি ওনাকে প্রথমেই বুঝিয়ে বললাম যে ২৪ সপ্তাহের পর সিম্যাগ প্রোটোকল নিলে সাকসেস রেট কমে যায়, তবু উনি নিতে চান কিনা??

আপা বললেন, উনি চেষ্টা করতে চান।

তিনি ওভারওয়েট ছিলেন, ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি, ব্যাকপেইন, প্যানিক এটাক, এজমা এবং ক্লস্ট্রোফোবিয়া ছিল। সব মিলিয়ে এটা ছিল একটা ভেরি হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি।

তো প্রথমে আমি সুগার নরমাল করার দিকে নজর দিলাম। ২ সপ্তাহের ভেতরেই সুগার নরমাল হল। কিন্তু বেবির গ্রোথ হচ্ছিল কম এজন্য ডক্টর ওনাকে চাপ দিচ্ছিলেন।

এই কম মানে কিন্তু খুব বেশি কম না।

আমাদের উপমহাদেশের হিউম্যান ফিটাসের জন্য ২.৫ কেজি থেকে ৩.৫ কেজি হচ্ছে স্বাভাবিক ওজন। এর বেশি হলে ন্যাচারাল ডেলিভারি কঠিন হয়ে যায়। ৩ কেজির বেশি হলেই ন্যাচারাল ডেলিভারির সম্ভাবনা এই অঞ্চলে কমতে থাকে, কারন এখানকার মায়েরা লম্বায় অপেক্ষাকৃত খর্ব হওয়াতে সেফালোপেলভিক ডিজপ্রোপোর্শনের রিস্ক তৈরি হয়।

সাধারনত, প্রেগন্যান্সিতে বাংলাদেশের মায়েরা এখন বেড রেস্টে থাকেন এবং ৫-৬ মাস থেকে প্রচুর খাওয়া দাওয়া করেন। ফলে শিশুর ওজন বেড়ে খুব সহজেই ৩ কেজি পেরিয়ে যায়, ফলে ন্যাচারাল ডেলিভারি দুরুহ হয়ে পড়ে। আর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সির ফলে শেষদিকে গিয়ে হাল ছেড়ে দেয়া, পানি না আসার সমস্যা তো আছেই।

সাদিয়া আপার মত হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সিগুলোতে বাচ্চা বেশি বড় হয়ে গেলে মায়ের জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে, যেটা অনেকেই বোঝেন না। সবাই এখন মনে করে বাচ্চা যত বড়, বাচ্চা তত সুস্থ থাকবে। অথচ ডায়বেটিক মাদারদের ৪ কেজির ওপরের বাচ্চারাও ডায়বেটিসের উচ্চ ঝুকির সম্ভাবনায় থাকে।

তো আমি ঠিক করলাম বাবুটার ওজন আমার টার্গেট রেঞ্জে আটকে রাখবো। ৩৬-৩৮ সপ্তাহের মধ্যে ৩ কেজির ওপরে যেতে দেয়া যাবে না। ন্যাচারাল ডেলিভারি হোক বা না হোক, এই আপুকে একটা লাইফ সেইভিং ম্যানেজমেন্টের ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শেষ কাজটা ডাক্তারই করবেন, কিন্তু ডাক্তারের কাজটা যেন সহজ হয়, সেই ব্যবস্থাটা এখন থেকে না করলে শেষ মুহুর্তে গিয়ে ডাক্তার নিজেও কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাবেন।

৩০ সপ্তাহ নাগাদ সবাই সাদিয়া আপাকে চেপে ধরলো, কি ডায়েট করো তুমি বাবুর ওজন তো বাড়ে না। একদিকে বাবুর ওজন বাড়ানো নিয়ে চাপ অন্যদিকে ডায়বেটিস-প্যানিক ম্যানেজমেন্ট নিয়েও চাপে ওনার অবস্থা দিশেহারা।

আমি শুধু ওনাকে বললাম আপা, ধৈর্য ধরেন, ফল আসবে ইনশা আল্লাহ। ৩৬ সপ্তাহে গিয়ে বাবুর ওজন ২.৫ কেজি ছাড়ালো। ততদিনে উনি চলে এসেছেন ডায়বেটিক থেকে প্রিডায়বেটিক লেভেলে।

এর ঠিক পর আরেকটা খারাপ খবর পেলাম। আগের সি সেকশনের সময় ওনার ইউটেরাইন স্কার হয়েছিল। এটা যখন ধরা পড়লো তখন আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে এই বাবুটা নরমাল হচ্ছে না।

অবশেষে গত ৭ তারিখে সাদিয়া আপুর সি সেকশান হলো। এটা একটা মেজর অপারেশন ছিল।

সেকেন্ড ডিগ্রি ইউটেরাইন স্কার, সিভিয়ার লো ব্যাকপেইন এন্ড মাসল ক্র‍্যাম্পস, এজমা, প্যানিক ডিজর্ডার আর প্রি ডায়বেটিসের মিক্সচারে এটা ছিল আমার দেখা অন্যতম ক্রিটিক্যাল প্রেগন্যান্সি। গাইনোকলোজিস্টের ওপর দিয়েও অনেক চাপ গেছে।

তবে ছেলে ও মা দুজনেই এখন ভাল আছেন, আলহামদুলিল্লাহ। বার্থ ওয়েট ছিল ২.৯ কেজি। সবচেয়ে বড় কথা কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ডেলিভারিটা করানো সম্ভব হয়েছে।

সাদিয়া আপা ৪ মাস ল্যাকটেশনের পর থেকে ধীরে ধীরে ডায়বেটিস রিভার্সিং প্রোটোকলে যেতে শুরু করবেন ইনশা আল্লাহ।

মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

Share
sadia