Top

সিম্যাগ বেবি: সাক্সেস স্টোরি – ১১

Sajal’s Diet Falsafa / CMag Baby  / সিম্যাগ বেবি: সাক্সেস স্টোরি – ১১

সিম্যাগ বেবি: সাক্সেস স্টোরি – ১১

আমাদের একজন নতুন সিম্যাগ শিশু দুনিয়ায় এসেছেন।
মাসুদা আপার বয়স ৩৮ বছর। প্রেগন্যান্সির ১৬ সপ্তাহের মাথায় তিনি এনিমিয়া ও লো ব্যাকপেইনের সমস্যা নিয়ে সিম্যাগ প্রোটোকলে জয়েন করেন। এর সাথে যুক্ত হয় তার জেস্টেশনাল ডায়বেটিস, গলব্লাডারে ছিল এডিনোমায়োমাইসিটিস। সব মিলিয়ে এটা ছিল একটা বেশ কমপ্লিকেটেড প্রেগন্যান্সি, আমি নিজেও আশা করি নি যে এই বাবুটা ন্যাচারাল হবে।
জেস্টেশনাল ডায়বেটিস যাদের হয় তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে তিনটা।
১)প্রিএক্ল্যাম্পশিয়া-এটা গর্ভাবস্থার শেষে ঘটে, মূলত প্রসবের সময়। শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ এবং আরো অনেক জটিলতা। গড়ে দুজনের একজন বাচেন, একজন মারা যান।
২)এমনিওটিক ফ্লুইড না আসা
৩)ইন্ট্রা-ইউটেরাইন কন্ট্র‍্যাকশন না হওয়া, তথা জরায়ু যথাযথভাবে সংকুচিত না হওয়া।
এই তিনটা সমস্যাই মাসুদা আপার হওয়ার চান্স ছিল খুব বেশি।
তবু ওনার ডিটারমিনেশন দেখে আমার মনে হল, আল্লাহ ভরসা, দেখি না কি হয়!!
লাস্ট ট্রাইমেস্টারে মাসুদা আপুর ইনসুলিন নিতেই হচ্ছিল, আমিও উপায় দেখছিলাম না, কারন বাবুর ওজন এসেছিল কম, তাকে আমার অনেক খাবার দিতে হচ্ছিল। একই সাথে বাবুর ওয়েট বাড়ানো, ডায়বেটিস কন্ট্রোল এবং গলব্লাডার এডিনোমায়োমাইসিটিস হ্যান্ডল করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।
এরমধ্যে হল আরেক মুসিবত, বাবুর পজিশন কাত হয়ে গেল যাকে বলে ব্রিচ।
এরমধ্যে ৩৫ সপ্তাহে মাসুদা আপু আমাকে জানালেন তার বাবুর সম্ভবত ওজন আর বাড়ছে না। আমি বললাম আল্ট্রা করতে।
উনি দেখলেন ওজন আড়াই কেজি ছাড়িয়েছে।
এর পরের সপ্তাহে ওনার পেইন উঠলো, কিন্তু জরায়ুমুখ খুললো মাত্র ১ সেমি। ডাক্তার বললেন ডায়বেটিস আর বয়স বেশি, নরমাল করানো যাবে না। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন মাইক্রোতে করে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসবেন কিনা??
আমি বললাম না, রাজশাহীতে থাকেন। আমি আমার জায়গা থেকে রিস্ক নিতে চাই নি ওনাকে নিয়ে, কারন অনেকগুলি কমপ্লিকেশান।
এই দুর্দান্ত সাহসী মহিলা কি করলেন, স্বামীকে বুঝিয়ে মাইক্রোতে করে ঢাকা চলে আসলেন।
আমাকে বাবু হওয়ার পরদিন টেক্সট করলেন। আমার একটু মন খারাপ ছিল কারন এই কেইসটা নিয়ে আমি খুব মাথা খাটিয়েছিলাম। এর সাথে আগের দুদিনে দুইজন মায়ের খবর পেলাম, যারা আসলে স্রেফ সাহসের অভাবে ন্যাচারাল ডেলিভারি করাতে পারেন নি।
টেক্সটে যখন লেখা দেখলাম আলহামদুলিল্লাহ আমার বাবু হয়ে গেছে, আর সেটা নরমালে, আমার তো মন অনেক ভাল হয়ে গেল!!
সত্যি বলতে, ওনার মনোবল আর সাহস ওনাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
আমি শুধু ওনার যেন বাড়তি কোন কমপ্লিকেশান না থাকে, সেটা এড়ানোর জন্য সব ম্যানেজমেন্টগুলো করেছি।
আল্লাহর পরে এই ডেলিভারির সব ক্রেডিট আমি মাসুদা আপুকেই দেবো।
আমি লক্ষ্য করেছি, পয়ত্রিশের বেশি বয়সে যারা মা হন তাদের অনেকের মধ্যেই একটা বাড়তি সাহস ও ইচ্ছাশক্তি থাকে, যেটা কম বয়সী মায়েদের অনেক সময়েই থাকে না।
৩৮ বছর বয়সে মাসুদা আপু এই বছরের সবচেয়ে সিনিয়র সাকসেসফুল সিম্যাগ মাদার। গত বছর সবচেয়ে সিনিয়র তিনজন সাকসেসফুল সিম্যাগ মাদারের বয়স ছিল যথাক্রমে ৪৪, ৪২ ও ৩৭ বছর।
মাসুদা আপু ও তার বাবুর জন্য দোয়া ও ভালোবাসা!!

Share
sadia