সিম্যাগ বেবি: সাক্সেস স্টোরি – ১৩
ন্ডন(ইউকে) প্রবাসী ফারজানা আপু জীবনে ষষ্ঠবারের মত গর্ভবতী হলেন গত বছর, তখন তার বয়স ৩৭। ওজন ছিল ৫ ফুট ২ ইঞ্চিতে ৬২ কেজি। প্রথম তিন সন্তানের জন্মের পর আপুর দুইবার মিসক্যারেজ হয়েছিল। বয়স বেশি, সেই সাথে অসুস্থতা মিলে ফারজানা আপু একেবারেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না।
সার্বক্ষনিক ক্লান্তি, সারাক্ষনই গা ব্যথা, দুর্বলতা ও মাথাঘোরা নিয়ে ক্লান্ত আমাদের এই বোনটা প্রেগন্যান্সির শুরু থেকেই আতঙ্কিত ছিলেন মিসক্যারেজ নিয়ে।
৫ সপ্তাহের মাথায়ই তিনি তাই সিম্যাগ প্রোটোকল নিলেন। কিন্তু দুই মাসের ছুটিতে ইউকে থেকে দেশে ফেরার পর কিছুই ঠিকভাবে মেনে চলা হল না। তবু আল্লাহর ফজলে এবার মিসক্যারেজ হল না।
২৫ সপ্তাহের মাথায় তার মধ্যে জেস্টেশনাল ডায়বেটিসের বেশ কিছু লক্ষন দেখা দিল। আমি বাড়তি সতর্ক হয়ে উঠলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আপুর ওয়েটকে আটকে রাখা হবে একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জে, কিন্তু এমনভাবে ডায়েট করানো হবে যেন বাচ্চা বাড়তে থাকে। এধরনের ক্ষেত্রে সাধারনত আমি প্যাশেন্টকে কিছুই বলি না, কারন বেশিরভাগ মায়ের মনেই প্রেগন্যান্সিতে নানান আতঙ্ক এসে ভর করে, তাদের বাড়তি ভয় দেখানোর আসলে কোন মানে হয় না যতক্ষন আমি ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে পারছি।
জেস্টেশনাল ডায়বেটিস এড়ানোর জন্য বাড়তি ওজনের রোগী এবং প্রথম ৬ মাসে বাড়তি ওয়েট গেইন করে ফেলা/ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকা রোগীদেরকে আমি কিছু বাড়তি ম্যানেজমেন্টে রাখি।
ফারজানা আপুকেও সেগুলো দেয়া হল।
আল্লাহর অশেষ রহমতে ছবির এই ফুটফুটে বাবুটা গত এপ্রিল মাসে পৃথিবীর মুখ দেখে। ওর নাম আব্দুল্লাহ। ৩৮ সপ্তাহ ৩ দিনের মাথায় আব্দুল্লাহ পৃথিবীতে এসেছে। একদম শেষ পর্যন্ত আমরা এড়াতে সক্ষম হয়েছি এক্ল্যাম্পশিয়া এবং জেস্টেশনাল ডায়বেটিসও।
প্যাশেন্টস নোটঃ
শুকরিয়া, আপনার পরামর্শ এবং সাহস দেয়ার জন্য। এবারের প্রেগন্যান্সিতে আমি অনেক দূর্বল এবং একটু ভীত ছিলাম। দূর্বলতা কেটে গিয়েছিলো আলহামদুলিল্লাহ। সেই সাথে শরীরের বিভিন্ন ব্যাথাও অনেকটাই কমে গিয়েছিলো। মনেও যথেষ্ট সাহস চলে এসেছিলো। শেষ সময় পর্যন্ত বাইরে হেঁটেছি। চেয়ার ছাড়াই নামাজ পড়েছি। ব্যাথা উঠেছিলো রাত ১২:৩০ এ। হাসপাতালে গিয়েছি রাত ৩টায়। ডেলীভারি হয়েছে ৪:৫০।
আগের তিনবারের চেয়ে এবার অনেক তাড়াতাড়ি রিকভার করছি আল্লাহর রহমতে।
আব্দুল্লাহ এবং আব্দুল্লাহর আম্মু সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী।
সিম্যাগ প্রোটোকলের মাধ্যমে আমরা শুধু যে ন্যাচারাল ডেলিভারিই সহজ করতে পারি তা নয়, বরঞ্চ আমরা দূর করতে পারি গর্ভকালীন ভোষন শারীরিক অসুস্থতা, কমাতে পারি জেস্টেশনাল ডায়বেটিসের হার এবং এক্ল্যাম্পশিয়ার মত বিপজ্জনক জটিলতা। পাশাপাশি আমরা আমাদের শিশুদের দিতে পারি হাড়, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বাড়তি নিউট্রিয়েন্টস।
সিম্যাগ শিশুদের জীবন সুন্দর হোক।
মাতৃত্ব হোক নিরাপদ ও স্বাভাবিক।