কিটো ডায়েট ও মাসল বিল্ডিং
কিটো ওয়েট লসের জন্য চমৎকার একটা ডায়্রট, যদিও বাস্তবে কিটো করা বেশ কঠিন। কিন্তু কিটোর উদ্দেশ্য কেবল ওজন কমানোই না।
যদিও ওজন এবং চর্বি কমাতে এবং তা ধরে রাখতে কিটোজেনিক ডায়েটের কার্যকাররিতা ডজন ডজন রিসার্চ স্টাডি দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, তবুও স্লিমিং ছাড়াও প্রকৃতপক্ষে এই ডায়েটের আরো বিভিন্ন প্রয়োগ রয়েছে।
এ প্রয়োগ গুলোর মধ্যে একটি হলো অ্যাথলেট এবং ঐসব ব্যক্তিদের জন্য যারা লিন, স্ট্রং এবং মাসলে প্যাক করা বডি চান। অবশ্য কিটোজেনিক ডায়েট নিয়ে একটি প্রচলিত সাধারণ মিথ হলো-এটি হাই প্রোটিন ডায়েট নয় ,এটি মাসল গেইনকে একেবারে অসম্ভব না হলেও, কঠিন করে তোলে।
এই বিশ্বাসের উৎসটা কী এবং এর সমালোচনার গভীরতাই বা কতটুকু ? বডি বিল্ডারদের কি কিটো করা উচিত ?
বাস্তবে, আপনি যথেষ্ট কঠোর কিটোজেনিক ডায়েট মেনে চলাকালীন মাসল মাস বজায় রাখতে এবং এমনকি তৈরিও করতে পারেন। তবে প্রথমে চলুন মাসল কিভাবে তৈরি হয় তার কিছু মৌলিক বিষয় জেনে নেই ।
মাসল প্রোটিন সিনথেসিস :
মাসল প্রোটিন সিনথেসিস হল একটি প্রক্রিয়া যা আমাদের শরীর নতুন প্রোটিন তৈরি করতে ব্যবহার করে। আমাদের শরীরের মাসল মাস তৈরিতে ও বাড়াতে অপরিহার্য এই প্রক্রিয়াটি মাসল হাইপারট্রফি নামে পরিচিত। প্রোটিন সিনথেসিস কে নিয়ন্ত্রণ করে এমন কিছু বায়োকেমিক্যাল পাথওয়ে রয়েছে। এই এনাবলিক পাথওয়েগুলো খাদ্য থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি এবং এক্সারসাইজ দ্বারা সক্রিয় হয়।যদিও এক্সারসাইজ বলতে কিছু নির্দিষ্ট এক্সারসাইজ কে বোঝানো হয়েছে।
সুতরাং মাসল বাড়াতে চাইলে আপনার ওয়েট লিফটিংয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত। কিন্তু এই ওয়েট লিফটিং ঠিক কিভাবে মাসল সাইজ বাড়ায়?
mTOR এবং মাসল বিল্ডিং:
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার জন্য রাপামাইসিন(mTOR) এ দিন দিন বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই সেলুলার সেন্সর (অর্থাৎ mTOR) মাসল হাইপারট্রফি এবং প্রোটিন সিনথেসিসের সাথেও জড়িত।
mTOR হলো একটি নিউট্রিয়েন্ট সেন্সর যার মানে হল এটি বুঝতে পারে আমাদের শরীর কখন খাওয়ানো (fed) অথবা কখন অভুক্ত (fasted) অবস্থায় আছে।
এই mTOR মেকানিক্যাল ফোর্সও অনুভব করতে পারে এবং হাইপারট্রফিতে এর ইনভলভমেন্ট বা সম্পৃক্ততা এখান থেকেই আসে। যখন আমরা ভারী ওজন তুলে আমাদের মাসলকে ওভারলোড করি তখন mTORও সক্রিয় হয়।[1,2] mTOR অ্যাক্টিভেশনের দুটি কাজ রয়েছে-
– মাসল প্রোটিন সিন্থেসিসকে স্টিমুলেট করা এবং
– প্রোটিনের ব্রেকডাউনকে বাধা দেওয়া।
মাসল মাস বাড়াতে সাহায্য করার বিষয়ে এর একটি দ্বৈত প্রভাব রয়েছে।
মজার বিষয় হলো আপনি যত বেশি mTOR অ্যাকটিভ করতে পারবেন তত বেশি আপনি মাসল মাস এবং শক্তি বাড়াতে পারবেন।[3,4] এটি একটি ডোজ-রেসপন্স ইফেক্ট।এছাড়াও আমাদের শরীরের কিছু হরমোন দ্বারাও mTORকে সক্রিয় করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে – ইনসুলিন এবং ইনসুলিন লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর যারা উভয়ই mTORকে সক্রিয় করে এবং মাসল প্রোটিন সিনথেসিস বৃদ্ধি করে।[1]
এমাইনো এসিডের অপরিহার্যতা :
সমস্ত প্রোটিন অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি এ কারণেই এদেরকে প্রোটিনের ‘বিল্ডিং ব্লক‘ বলা হয়। অ্যামাইনো এসিড ছাড়া আমরা মাসল তৈরি করতে পারতাম না। এসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড আমাদের শরীরে তৈরি হয় না,আমাদেরকে এগুলো খাদ্য থেকে গ্রহণ করতে হয়।
BCAAs, বিশেষ করে BCAA লিউসিনের গ্রহণ, mTOR এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাসল প্রোটিন সিনথেসিসকে উদ্দীপিত করে। [5,6,7] গবেষণায় দেখা গেছে BCAAs মাসল হাইপারট্রফি সৃষ্টি করতে এবং মাসল ব্রেকডাউন প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর,এমনকি গ্রোথ ফ্যাক্টর ইনসুলিনের চেয়েও বেশি কার্যকর। [8,9]
হার্ড-ওয়ার্কআউটের পরে যে প্রোটিন ইনটেক করতে বলা হয় এর কারণ মূলত এই অ্যামাইনো এসিড । কেননা এটি মাসল প্রোটিন সিনথেসিসকে সবচেয়ে বেশি স্টিমুলেট করতে এবং হেভি ওয়ার্কআউটের পরবর্তী শরীরের রিকভারিতে এটি সাহায্য করে। যদিও মাসল প্রোটিন সিনথেসিসের জন্য সামগ্রিকভাবে প্রোটিনের ব্যালেন্স থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কিছু তথ্য ও গবেষণায় দেখা যায়, এক্সারসাইজের পর ২০-৩০ গ্রাম হাই কোয়ালিটি প্রোটিন গ্রহণে প্রোটিনের সিন্থেসিসকে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্টিমুলেট করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।এর মধ্যে অন্তত ২ গ্রাম লিউসিন রাখা উচিত যা প্রোটিন সিনথেসিসের সবচেয়ে শক্তিশালী চালিকাশক্তি।
মাসল তৈরিতে কি কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন?
যেহেতু কিটো ডায়েটে কার্বসের পরিমাণ খুবই কম থাকে তাই বডি বিল্ডিং এবং স্পোর্টস পারফরম্যান্স সম্প্রদায়ের অনেকেই এটি পছন্দ করেন না । মাসল গ্রোথের জন্য কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজনীয় এই ধারণাটি এসেছে সম্ভবত ইনসুলিন এবং IGF-1 এর জন্য কেননা এগুলো কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের প্রতিক্রিয়াতে বৃদ্ধি পায় আবার এরা মাসল প্রোটিন সিনথেসিসকেও উদ্দীপিত করে।
এছাড়াও পোস্ট-ওয়ার্কআউট উইন্ডোতে অ্যাথলেটদেরকে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন দুইটাই খাওয়ার জন্য অনেকে রিকমেন্ড করে থাকেন কেননা ধারণা করা হয় এতে তার মাসল গেইন এবং ওয়ার্কআউট পরবর্তী বডি রিকভারিতে এটি সর্বাধিক হেল্পফুল হবে। আবার এটাও ধারণা করা হয় যেহেতু কার্বোহাইড্রেটগুলো ইনসুলিনকে স্টিমুলেট করে তাই প্রোটিনের পাশাপাশি এই ইনসুলিনও এসে তখন মাসল প্রোটিন সিন্থেসিসকে বাড়াবে।
যাই হোক, কিন্তু যখন বিভিন্ন স্টাডিতে এক্সারসাইজের পর শুধু প্রোটিন গ্রহণ এবং কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের একত্রে গ্রহণ এই দুইটি বিষয়ের তুলনা করা হয় তখন দেখা যায় মূলত মাসল প্রোটিন সিনথেসিসে এতে কোন পার্থক্যই হয় না।[10,11,12,13] অর্থাৎ এখানে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে এক্সট্রা আসলে কোনও সুবিধা পাওয়া যায়নি। এর কারণ হলো শুধুমাত্র পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণই মাসল প্রোটিন সিনথেসিস এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন লেভেল বাড়াতে এবং mTORকে অ্যাক্টিভ করতে যথেষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশি ইনসুলিন মানেই বেশি প্রোটিন সিনথেসিস ব্যাপারটা মোটেও এরকম নয়।[10,11]
মাসল তৈরিতে কিটো ডায়েট ব্যবহার করা যায় এর বিরুদ্ধের তর্কগুলোকে এই যুক্তি দিয়েই থামানো সম্ভব।কিন্তু তারপরেও আরো একটা বিরোধিতা থেকে যায় সেটা হলো- মাসলে গ্লাইকোজেনের উপস্থিতি।
এক্সারসাইজের সময় গ্লাইকোজেন স্টোর কম থাকলে এটি শক্তির প্রাপ্যতা এবং কর্মক্ষমতাকে সীমিত করে দিতে পারে। এরকম কিছু হোক এটা অবশ্যই কোন অ্যাথলেট চায় না। মূলত অ্যাথলেটদের মধ্যে যারা ইনডিউরেন্স অ্যাক্টিভিটির সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রে লো-গ্লাইকোজেন একটা ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে যারা ওয়েট লিফটিং বা বডি বিল্ডিং এর সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রে এই লো-গ্লাইকোজেন বিষয়টি কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। প্রকৃতপক্ষে যেসব অ্যাথলেটরা কিটো করেন তাদের সাথে যেসব এথলেটরা দৈনিক গড়ে ৬০০ গ্রামের মতো কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন তাদের তুলনা করলে দেখা যায়, উভয় গ্রুপের ক্ষেত্রেই বডিতে সঞ্চিত মাসল গ্লাইকোজেন লেভেল একই ছিল। দেখা যায়, কার্বোহাইড্রেট গ্রহণকারী অ্যাথলেটরা যে পরিমাণ গ্লাইকোজেন স্টোর করতে পারে তাদের চেয়ে ৭৫% কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেও কিটোতে অভ্যস্তরা এথলেটরাও একই পরিমাণ গ্লাইকোজেন স্টোর করতে সক্ষম।[14] এক্ষেত্রে কিছু তো একটা ঘটে যা কিটোতে অভ্যস্ত এথলেটদেরও হাই-গ্লাইকোজেন লেভেল ধরে রাখতে সাহায্য করে।কিন্তু সেটা কী?
আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করিনা, ঐ সময়ে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর গ্লুকোজ এবং গ্লাইকোজেন লেভেল বজায় রাখতে পারে যা গ্লুকোনিয়োজেনেসিস বা সংক্ষেপে GNG নামে পরিচিত। GNG হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বডি নন-কার্বোহাইড্রেট সোর্স থেকে গ্লুকোজ তৈরি করে থাকে।এক্ষেত্রে প্রধানত তা আসে এমাইনো এসিড এবং ফ্যাটি এসিড থেকে প্রাপ্ত গ্লিসারল থেকে। এভাবেই এই বিভিন্ন সাবস্ট্রেটগুলো থেকে গ্লুকোজ তৈরি করে কম কার্ব গ্রহণকারী এথলেটরা কার্ব গ্রহণকারী অ্যাথলেটদের মতো একই পরিমাণ মাসল গ্লাইকোজেন লেভেল বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
সুতরাং মূল বিষয় দাঁড়ালো,মাসল তৈরি করতে বা পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লুকোজ এবং গ্লাইকোজেন মেইনটেইন করতে কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন হয় না।
তবে মাসলগুলোকে লক্ষ্যণীয় ভাবে বড়,শক্তিশালী বা দীর্ঘতর করার ক্ষেত্রে কিটো বেস্ট চয়েজ নয়। কিন্তু এই কনটেন্টটি বেইসিক মাসল গ্রোথের সাথে সম্পর্কিত একটি কনটেন্ট। তাই এক্ষেত্রে দেখে নেওয়া যাক কিটোজেনিক ডায়েটের মাধ্যমে মাসল তৈরি করার বিষয়ে এভিডেন্স আসলে কি বলে?
কিভাবে কিটো ডায়েট মাসল তৈরিতে সহায়ক?:
আপনি কিটোতে মাসল তৈরি করতে পারবেন না এরকম ধারণা কোথা থেকে এসেছে?
প্রথমত, একদল এটা মনে করেন, লো-কার্ব ডায়েট ইনসুলিন / IGF-1কে যথেষ্ট পরিমাণ স্টিমুলেট করতে ব্যর্থ হবে এবং এটি মাসল গ্রো করার ক্ষমতা বা এমনকি লসের কারণ হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন যে, আপনি যদি প্রোটিনের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ না করেন তবে আপনার প্রোটিন সিনথেসিস অপটিমাম লেভেলে হবে না।
দ্বিতীয়ত এবং সম্ভবত এটাই মূল কারণ যে, অনেকে মনে করেন কিটোজেনিক ডায়েট হলো এমন একটি ডায়েট যা উচ্চমাত্রায় প্রোটিন গ্রহণকে উৎসাহিত করে না এবং প্রোটিন গ্রহণকে মোট ক্যালোরির ১০-১৫%এ সীমাবদ্ধ করে রাখে। এই থিওরি মতে যেহেতু লার্জ মাসল গ্রো করতে প্রোটিন অপরিহার্য, তাই প্রোটিন গ্রহণ সীমিত করলে তা মাসল টিস্যুর ক্ষতি বা মাসল বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রকৃতপক্ষে রিসার্চ ডেটাগুলো এই দুটোর কোনোটিকেই সমর্থন করে না।
লিন বডি পেতে কিটোতে থাকুন :
মাসল গেইন করা তো বটেই এছাড়াও স্ট্রেংন্থ বেইজড এথলেটদের আরেকটি লক্ষ্য হলো শরীরের গঠন অপটিমাইজ করা । লো-কার্ব , হাই ফ্যাট ডায়েট এটি করতে পারে । গবেষণায় দেখা গেছে, যেসকল অ্যাথলেটরা কিটো ডায়েট অনুসরণ করেন তারা হাই কার্র ডায়েট অনুসরণকারীদের চেয়ে বেশি বডি ফ্যাট লস করেন।[15,16]
৮ সপ্তাহের একটি কিটো ডায়েট এবং রেজিস্টেন্স ট্রেনিং প্রোগ্রামের পরে দেখা যায়, প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের ফ্যাট মাস এবং ভিসেরাল এডিপোজ টিস্যু হ্রাস পেয়েছে। নন-কিটো গ্রুপে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।[17]
এতে বুঝা যায় যে কিটো ডায়েটে আপনার শরীর একবার ফ্যাট বার্ন করে শক্তি তৈরি করতে শিখে গেলে তখন শরীরে ফ্যাট মাস এবং বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ কমে যাবে। কিটোজেনিক ডায়েটে থাকাকালীন আপনি যদি আপনার লীন মাসল মাস বজায় রাখেন তাহলে আপনার শরীরের ফ্যাট বার্ন করার ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে আপনার বডি কম্পোজিশন আগের চেয়ে বেটার হবে, যেখানে ফ্যাট কম থাকবে এবং পর্যাপ্ত লীন মাস উপস্থিত থাকবে।
প্রোটিন ব্রেক ডাউন প্রতিরোধে কিটোঃ
আপনি যদি পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করেন, তাহলে আপনার মাসল লস এবং দুর্বলতা অনুভব হতে পারে- এ ধরনের উদ্বেগের মধ্যে ঐসকল মানুষকে থাকতে দেখা যায় যারা মনে করেন লীন মাসল মাস বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের প্রোটিনের অনুপস্থিতি রয়েছে কিটো ডায়েটে।
যাই হোক এক্ষেত্রে রিসার্চ কিন্তু ঠিক বিপরীতটাই দেখাচ্ছে যে প্রকৃতপক্ষে কিটোজেনিক ডায়েট মাসল ব্রেক ডাউন প্রতিরোধ করে। যখন সমপরিমাণ ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা হয় যাতে প্রোটিনের পরিমাণ সমান কিন্তু কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা ভিন্ন হয়, তখন দেখা যায় লো-কার্ব ডায়েটে লিন মাসল মাস মেইন্টেইন করা যায় বেশি।[18]
কিটোসিস আসলে আমাদের প্রোটিন ব্যবহার করার এবিলিটিকে বাড়াতে সাহায্য করে। কেননা এক্ষেত্রে শরীরকে গ্লুকোনিওজেনেসিস এর জন্য প্রোটিন ভাঙ্গতে হয় না, এর পরিবর্তে শরীর কিটোন ব্যবহার করে ও প্রোটিনকে জমিয়ে রাখে এবং এ বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণা দ্বারাও সমর্থিত। কিটোসিস এবং কিটোন বডিজের ইনফিউশনের সময় দেখা যায় শক্তির জন্য BCAAs এর ব্যবহার হ্রাস পায়, যার ফলে প্রোটিন সিন্থেসিস এবং মাসল মেইনটেইন করার এবিলিটি বৃদ্ধি পায়।[19,20] কিটোনগুলো শুধু মাসল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রোটিনকে বাঁচিয়েই রাখে না বরং মাসল প্রোটিন সিন্থেসিসকেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দেয়। অ্যাথলেটদের মধ্যে যারা BHB মনোএস্টারের তৈরি কিটোন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেছিলেন দেখা যায় তাদের mTOR এর এক্টিভিটিও বৃদ্ধি পেয়েছিল, যার ফলে তাদের প্রোটিন সিন্থেসিস দ্বিগুণ হয়ে গেছে।[21]
সুস্থ যুবকদের উপর ১০ সপ্তাহব্যাপী করা এক গবেষণায় রেজিস্টেন্স ট্রেইনিং এর সময় লো-কার্ব ডায়েট এবং গতানুগতিক ওয়েস্টার্ন ডায়েটের মধ্যে তুলনা করে দেখানো হয়। দশ সপ্তাহ পর দেখা যায় লো-কার্ব ডায়েটে থাকা যুবকদের ২.৪% লিন বডি মাস বেড়েছে এবং তাদের ফ্যাট মাস কমেছে ২.২ কিলোগ্রাম, যা সাধারন ডায়েটে থাকা যুবকদের মতো একই ছিল।[22] কিন্তু ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, গবেষণা চলাকালীন এই সময়ে কিটো ডায়েট গ্রুপের যুবকদের টেস্টোস্টেরন লেভেলের ভালো উন্নতি হয়েছিল। এই গবেষণাটি সাজেস্ট করে যে, স্ট্রেংন্থ ট্রেইনিং এবং কিটো ডায়েট একত্রে করা হলে তা লিন মাসল মাস বাড়ানোর মাধ্যমে হেলদি ওয়েট গেইনে খুবই সহায়ক। দুটি গবেষণা এর প্রমাণ দেয়। প্রথমটিতে অভিজাত জিমনেস্টদের একটি গ্রুপ তাদের ট্রেইনিংয়ের রুটিনের পাশাপাশি একটি কিটোজেনিক ডায়েট গ্রহণ করেছিলেন গবেষণার শেষে মাসল মাস একই ছিল কিন্তু তারা উল্লেখযোগ্য হারে বডি ফ্যাট এবং বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ কমিয়ে প্রকৃতপক্ষে লিন বডি পেতে সক্ষম হয়েছিলেন।[23]
আরো একটি গবেষণায়ও অনুরূপ ফলাফল দেখা যায়।
একটি কিটো জেনিক ডায়েটে ছয় সপ্তাহের পরে ক্রসফিট প্রোগ্রামে এথলেটগণ তাদের শরীরের মাসল মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন অনুভব করেননি, কিন্তু তাদের ওজন,বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ এবং ফ্যাট মাস উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল।[24]
এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এই দুইটা গবেষণায়-ই কিটো ডায়েট গ্রুপ তাদের পারফরম্যান্স বা এক্টিভিটি মেইনটেইন করেছিলেন।
যেহেতু কিটো ডায়েটে কার্বস খুবই লো, সেজন্য হাই ইন্টেন্সিটি ওয়ার্ক আউট বা পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে অনেকে কিটো ডায়েট কে নিরুৎসাহিত করেন। কেননা এসবের জন্য প্রচুর কুইক এনার্জির দরকার হয়। কিন্তু যদি মাসল সম্পর্কিত অংশটুকুর কথায় আসি এক্ষেত্রে কিন্তু এটাই দেখা যায়, গবেষণার একটি বড় অংশ ইঙ্গিত দেয় যে, একটি রেজিস্ট্যান্স ট্রেইনিং প্রোগ্রামের সাথে একত্রে কিটো ডায়েট মেইনটেইন করলে সেটি লিন মাসল মাস মেইনটেইন করতে এবং বাড়াতে পারে, শরীরের চর্বি ও চর্বির পার্সেন্টেজ কমাতে পারে এবং যথেষ্ট পরিমাণ স্ট্রেংন্থ ও পাওয়ার বাড়াতে পারে।
মাসল বিল্ডিং এ সহায়তা করার ক্ষেত্রে কিটো ডায়েটের ভূমিকার উপর ভবিষ্যতে যে স্টাডিগুলো করা হবে সেগুলো যথেষ্ট এক্সাইটিং হবে বলেই মনে হচ্ছে।
প্রোটিন নিয়ে ভয় আর নয় :
যদিও কিটো ডায়েটে প্রধান আগ্রহের বিষয় কার্বোহাইড্রেট, তবে এক্ষেত্রে প্রোটিনও কম আগ্রহের বিষয় নয়। যদিও কিটো ডায়েট কোনো হাই প্রোটিন ডায়েট নয়, তার মানে এটা না যে এটি একটি লো প্রোটিন ডায়েট। আসলে কিটোর একচুয়াল ডেফিনেশনে এটি মডারেট প্রোটিন ডায়েট হিসেবে বিবেচিত।
বিষয়টি একটু সংখ্যা দিয়ে হিসেব করে বোঝানো যাক। যদি একটি ২৫০০ ক্যালোরির কিটোজেনিক ডায়েট এর ক্ষেত্রে ১৫% প্রোটিন থেকে নেই তাহলেও দেখা যায় দৈনিক ৯৩ গ্রাম প্রোটিন নিতে হবে । যদিও একজন হার্ড-কোর লিফ্টারের কাছে এই পরিমাণটা কম মনে হতে পারে, তথাপি এটি যথেষ্ট ভালো পরিমাণ প্রোটিন। তবে মোট ক্যালরির ২০-২৫% হিসেবে হাইপ্রোটিন ইনটেক করা কিটোতেও সম্ভব।
প্রোটিন রেস্ট্রিক্ট না করেও কেউ কেউ আবার কিটোসিসের শিকার হতে পারে। এটি বিশেষ করে হাই একটিভিটি এথলেটদের বেলায় বেশিরভাগ ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
তবে এক্সেস প্রোটিন গ্লুকোনিয়োজেনেসিসের কারণে আপনাকে কিটোসিস থেকে বাঁচাতে পারে এই সম্ভাবনা রয়েছে।এটা আসলে খুবই বিতর্কিত একটি বিষয়। প্রোটিন গ্রহণ যে কিটোজেনেসিস বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট GNG বৃদ্ধি করে এটা প্রমাণে বিভিন্ন গবেষণা ব্যর্থ হয়েছে অনেক সময়।তবে যাই হোক, GNG ধীরে ধীরে ঘটে এবং খাবারের পরে গ্লুকোজ তৈরির প্রক্রিয়া আসলে প্রোটিন কনটেন্ট বা ব্রেকডাউন এর থেকে আলাদা একটি বিষয়।[25] একটি গবেষণায় দেখা যায়, অপটিমাল জিএনজি কন্ডিশনেও প্রোটিনের ইনটেক জিএনজি বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।[26]
কিটোজেনিক ডায়েটে প্রোটিনের বিভিন্ন মাত্রার প্রভাব ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে । তবে যাই হোক কিটো ডায়েটে একটু বেশি প্রোটিন খাওয়ার জন্য ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এমনকি আপনি যদি মাসল তৈরি করতে চান এক্ষেত্রেও।
এখান থেকে যা পেলাম:
আমরা আশা করছি এ কনটেন্টটি ‘কিটোজেনিক ডায়েটে মাসল তৈরি করতে পারবেন না‘- এই মিথকে দূর করতে পেরেছে । রিসার্চ স্টাডিগুলো ধারাবাহিকভাবে দেখায় যে, কিটোজেনিক ডায়েটে থাকাকালীন ট্রেইনিংয়ে নিযুক্ত গ্রুপগুলো মাসল মাস বৃদ্ধি অথবা কমপক্ষে তা মেইনটেইন করতে সক্ষম হয়েছে ভালোভাবেই।
আপনি যদি একটি সঠিক ডায়েট মেইনটেইন করেন, শক্তির জন্য পর্যাপ্ত হেলদি ফ্যাট গ্রহণ করেন, তবে আপনি কিটোসিস কন্ডিশনেও আপনার পছন্দমতো হেলদি মাসল গেইন করতে পারবেন। আপনি ভার উত্তোলন, মাসলগেইন বা বাল্ক- আপ যাই করতে চান না কেন,একটি পরিকল্পিত কিটো ডায়েট আপনাকে আপনার লক্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করতে পারে।
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ গল্পগুলোও কিন্ত যথেষ্ট শক্তিশালী প্রমাণ। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডজন খানেক প্রমাণ দেখানো খুব একটা কঠিন হবেনা যেখানে দেখা যায় অনেকেই কিটোজেনিক ডায়েটে সফলভাবে ফ্যাট কমাতে এবং মাসল গেইন করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রমাণ নিজেই তো কথা বলে।
Courtesy: This content is sourced from https://hvmn.com/blogs/blog/keto-diet-building-muscle-on-keto-an-evidence-based-guide