Top

সাবিনা আক্তার আপুর বিশাল সিস্ট এবং ড্যামেজড হরমোনাল মেটাবলিজম থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার সাকসেস স্টোরি

Sajal’s Diet Falsafa / PCOS and Female Hormonal Imbalance  / সাবিনা আক্তার আপুর বিশাল সিস্ট এবং ড্যামেজড হরমোনাল মেটাবলিজম থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার সাকসেস স্টোরি

সাবিনা আক্তার আপুর বিশাল সিস্ট এবং ড্যামেজড হরমোনাল মেটাবলিজম থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার সাকসেস স্টোরি

বিসিএস কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার(ছদ্মনাম) প্রথম যখন আমার কাছে আসেন তখন পাঁচ ফুট আড়াই ইঞ্চি উচ্চতায় তখন তার ওজন ছিলো ৬৮ কেজি। অতিরিক্ত ওজন এবং পেটের অতিরিক্ত মেদ কমাতেই মূলত তিনি আমার কাছে আসেন।
হিস্ট্রি নেওয়ার পর জানতে পারলাম উনার সিভিয়ার মেন্সট্রুয়াল পেইন,তলপেটে প্রায়শই ব্যাথা লেগে থাকে, হুট-হাট হয় মুড সুইং। অ্যাসেসমেন্ট শেষে ধারণা করলাম ওভারিতে সিস্ট থাকতে পারে। সাথে আপুর ডিপ্রেশন, দুর্বলতা, লো-বিপি, ঘন-ঘন ক্ষুধা লাগা, আইবিএস-ডি ইত্যাদি সমস্যা ছিলো। আপুর পুরো হিস্ট্রির উপর বেসিস করে আল্ট্রা সহ তাকে আরো কিছু টেস্ট সাজেস্ট করলাম।
ইউএসজি রিপোর্ট পেয়ে হতবাক হলেন সাবিনা।উনি জানতেন ই না যে উনার বাম ওভারিতে (10.2×5.9) সে.মি.সাইজের একটা প্যারাওভারিয়ান সিস্ট আছে! এর সাথে ধরা পড়ে আপুর প্রজেস্টেরন হরমোনের তীব্র ঘাটতি আছে, আছে তীব্র ইনফ্ল্যামেশন, ভিটামিন-ডি ডেফিসিয়েন্সি আছে। ক্যান্সার বায়োমার্কারগুলো ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা বেশি। আমরা তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অনুরোধ করি প্রথমে।
এতবড় সিস্ট দেখে সার্জারির পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক, কিন্তু সাবিনা কোনভাবেই সার্জারিতে
যেতে রাজি হলেন না। ওনার তীব্র অনুরোধ ফেলতে না পেরে আমি রাজি হলাম ডায়েটারি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সিস্ট ডিজলভের থেরাপিউটিক ম্যানেজমেন্টে যেতে।
শুরু হলো আপুর ডায়েটারি জার্নি। আমাদের
প্রথম ফলো আপেই ২৪ ঘন্টা ফাস্টিং দিয়ে আপুর জার্নি শুরু হয়। পরবর্তী ফলোআপ গুলোতে ক্রমান্বয়ে ফাস্টিং আওয়ার ৩৬:১২ ঘন্টা, ৩৬:১২ ঘন্টা, ২৪:১ ঘন্টা ও ১৬:৮ ঘন্টা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ও থেরাপিউটিক সাপ্লিমেন্টেশনে রাখা হয়। প্রথম থেকেই এখানে চলছিল লো কার্ব-হাই ফ্যাট ডায়েট।
২য় বার যখন আপু চেম্বারে আসেন তখন ২ মাসে উনার প্রায় ৫ কেজির মতো ওজন কমে গিয়ে ওজন দাড়ায় ৬৩ কেজিতে। আপু আমাদের জানান, তার মুড সুইং, ডিপ্রেশন, দুর্বলতা কন্ট্রোলে চলে এসেছে।
৩য় ফলো আপে মেন্সট্রুয়াল পেইন পুরোপুরি চলে যায় বলে তিনি আমাদের জানান এবং সিস্টের সাইজ কমে (7.0×5.3×6.1) সেমি এ চলে আসে! প্রায় ৭ কেজির মতো ওজন কমে ৫৬ কেজিতে চলে আসে। এসময় আপুর প্রোজেস্টেরন লেভেল ও বেশ ভালো ইম্প্রুভ করে আলহামদুলিল্লাহ।
সবচেয়ে খুশির সংবাদ পাই যখন তিনি শেষবার চেম্বারে আসেন আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট নিয়ে, যার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি উনার ওভারিতে এখন আর কোনো সিস্ট নেই। লাস্ট ফলো আপ অনুযায়ী আপুর ওজন চলে এসেছে এখন ৫০ কেজিতে। উনার ক্যান্সার মার্কার ও রীতিমতো কমে এসেছে আলহামদুলিল্লাহ।
সাবিনা আপুর সম্পুর্ন সুস্থ হতে সময় লেগেছে প্রায় ১ বছর।
তাকে এখন রিফিডিং স্টেইজে রাখা হয়েছে, লম্বা সময় ফাস্টিং যারা করেন তাদের মেটাবলিজম স্বাভাবিক করতে রিফিডিং প্রয়োজন হয়।
এই বিশাল আকারের সিস্টগুলো শরীরের ভেতরে একটা ইকোসিস্টেম তৈরি করে ফেলে, যা থেকে বারবার এগুলো ফিরে আসার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এধরনের ম্যানেজমেন্ট শেষের পর একটা যথাযথ ডিসচার্জ প্রোটোকলে থাকা উচিত যেন এধরনের সমস্যা আর ফিরতে না পারে।
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে অগ্রগতি আমাদেরকে এখন বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন উপায় এনে দিয়েছে যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের ড্যামেজড হরমোনাল মেটাবলিজমকে ঠিক করতে পারি।
যেখানে মানুষ হাল ছেড়ে দেয়, সেখান থেকেই লাইফস্টাইল সায়েন্সের আশার নিশান শুরু।
Share
tanzima