কনের পিসিওএস থাকলে করণীয়
বিয়ের কথাবার্তা শুরু করতে যাচ্ছেন এবং কনের পিসিওএস আছে।
এক্ষেত্রে কি করা উচিত, এই প্রশ্নটা প্রতিদিনই কেউ না কেউ করেন।
প্রথমত, এক্ষেত্রে প্রশ্নটার শুধু সায়েন্টিফিক উত্তর দেয়াটা কোন সমাধান না। আমরা সায়েন্স দিয়ে জীবনের সমস্ত বিষয়ের সমাধান করি না, যুক্তির বাইরেও আমাদের কাছে নৈতিকতা, আবেগ-অনুভুতির মূল্য অনেক এবং এজন্যই আমরা মেশিন নই, মানুষ।
যাই হোক, পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজটা কি, এটা সবার বোঝার সুবিধার্থে সহজ করে আবার বলি(আগেও বলেছি অনেকবার), এটা একপ্রকার হরমোনাল ইমব্যালেন্স যার ফলে একজন নারীর ওভারিতে সিস্ট দেখা যায়(কোন কোন ক্ষেত্রে সিস্ট না থাকলেও পিসিওএস দেখা যায়)। এই সমস্যার কারনে সাধারনত নারীদের পেটের দিকে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত মাসিক চুলপড়া, অনাকাঙ্ক্ষিত লোম, হতাশা-বিষন্নতা, তীব্র মিড সুইং, খিটখিটে মেজাজ, যৌন অক্ষমতা, অকাল গর্ভপাত ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। (1)
কোন কোন ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো গড়ায় সন্তানধারনে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্ব, ওভারিয়ান টিউমার/ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও হার্ট ডিজিজের মত ভয়ংকর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে।
এখন, পিসিওএস থাকলেই কি এই সব কিছু হবে??
উত্তর হচ্ছে, না।
পিসিওএস থাকার পরেও অনেকেরই সন্তান হয় (যদিও ব্যাপারটা ঝুকিপূর্ণ) এবং পিসিওএসের সঠিক নিউট্রিশনাল ম্যানেজমেন্ট করলে পিসিওএস ভালও হয়ে যায়।
পিসিওএস প্যাশেন্টকে বিয়ের পর প্রধানত তিনটা সমস্যা আপনাকে সামাল দিতে হবে। তা আপনি পারবেন কিনা, এটা জেনে এরপর সিদ্ধান্ত নেয়াটাই আপনার ও তার জন্য ভাল হবে।
১) পিসিওএস রিভার্স না করা হলে তার সন্তানধারনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে এবং একাধিক মিসক্যারেজের ঝুকি থাকতে পারে। অতএব, সন্তান দ্রুত নেয়ার ব্যাপারে যদি আপনার তাড়াহুড়া থাকে, আপনাকে এই বিষয়টা বিবেচনা করতে হবে।
২) পিসিওএস রোগীর মানসিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল হয়। তীব্র মুড সুইং, ক্রনিক ডিপ্রেশন, যেকোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে তা গুলিয়ে ফেলা এবং খিটখিটে মেজাজ তাদের আচরনে লক্ষ্য করা যায় এবং এটা যতটা না তাদের দোষ তার চেয়ে বেশি হরমোনাল ইমব্যালেন্সের ফল। এই মানসিক অবস্থাকে আপনি সামাল দিতে মানসিকভাবে তৈরি কি না, আপনার সেই ম্যাচিউরিটি আছে কি না, ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু আপনার ও আপনার হবু স্ত্রীর নয় বরঞ্চ আপনার পরিবারের অন্যদের কথাও আপনাকে ভাবতে হবে।
পাশাপাশি, পিসিওএস প্যাশেন্ট মাসের একটা উল্লেখযোগ্য সময় স্বামীর সাথে যৌন সঙ্গমে আগ্রহী নাও থাকতে পারেন শারীরিক-মানসিক কারনে। এই ব্যাপারে তার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করে নিতে পারেন।
৩) আর্থিক সামর্থ্যঃ পিসিওএসের ট্রিটমেন্ট এবং পরবর্তীতে অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হলে সেগুলো সামাল দেয়ার মত আর্থিক সামর্থ্য আপনার আছে কিনা তা বিবেচনা করতে পারেন।
তবে আশার বিষয় হচ্ছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, লো কার্ব ডায়েট ও নিউট্রিশনাল থেরাপির মাধ্যমে প্রতিনিয়তই পিসিওএস ভাল হচ্ছে এবং তাদের অনেকে সন্তানসহ স্বাভাবিক জীবনেও ফিরছেন, ফিরে পাচ্ছেন মানসিক স্বাভাবিকতা ও সুন্দর যৌনজীবন। (2)
পিসিওএসকে অতিরিক্ত ভয় না পেয়ে, বরঞ্চ আমাদের উচিত লাইফস্টাইল ঠিক করা এবং সঠিক সময়ে নিউট্রিশনিস্টের কাছে আসা।
লাইফস্টাইল এন্ড নিউট্রিশন ইজ দ্যা নিউ মিরাকল!!