ডায়বেটিস এর লক্ষণগুলো কী কী? কীভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা?
এই মুহুর্তে আমেরিকার ১৮ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার প্রায় ৫১% হয় ডায়বেটিক নয় প্রিডায়বেটিক। বাংলাদেশে এখন ডায়বেটিস রোগী আছে সরকারী তথ্যমতেই ৭০ লাখের বেশি, বেসরকারী তথ্যমতে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। তার ওপর, আমাদের এমন বহু মানুষ আছে যারা এখনো ভালো করে বোঝেন না ডায়বেটিস কি। ঠিকঠাক অনুসন্ধান হলে আমার ধারনা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে দেড় কোটির ওপর মানুষ ডায়বেটিক এবং আরো দেড় থেকে দু কোটি মানুষ প্রিডায়বেটিক হবেন বলে আমি মনে করি। ডা. শাহীনুল আলমের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষনায় ২০১৭-১৮ সালে দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫% মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। সাধারনত ফ্যাটি লিভার টু ডায়বেটিস কনভারশন রেট ৬৬-৮০% এর মধ্যে হয়। মানে, আপনার ফ্যাটি লিভার থাকলে তা যদি দূর করা না হয় তবে ভবিষ্যতে সেটা ডায়বেটিসে রুপ নেয়ার সম্ভাবনা ৬৬-৮০% এর মত। এখন আমরা যদি সাড়ে চার কোটিকে ৬৬% দিয়ে গুন করি, তাহলে পাবো ৩ কোটি, ৮০% দিয়ে গুন করলে পাই ৩ কোটি ৬০ লাখ। এর মানে, ফ্যাটি লিভারকে ইন্ডিকেটর ধরলে, বাংলাদেশে সরাসরি ডায়বেটিসের ঝুকিতে থাকা মানুষের পরিমান ৩ কোটি থেকে ৩ কোটি ৬০ লাখের মধ্যে। পরোক্ষ ঝুকির কথা তো বাদই দিলাম। বুঝতেই পারছেন, আমরা একপ্রকার ডায়বেটিসের সাগরে বসবাস করছি। আপনার বাসায় পাচজন মানুষ থেকে থাকলে সম্ভাবনা খুবই বেশি যে অন্তত একজনের যেকোন মুহুর্তে ডায়বেটিস ধরা পড়তে পারে।
ডায়বেটিস হচ্ছে একটা গুপ্তঘাতক, যে আপনার শরীরের ভেতর ৩-১৭ বছর পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারে।
ডায়বেটিস একদিনে ডায়বেটিসে পরিনত হয় না। আমরা যদি নিজের শারীরিক অবস্থাকে মাঝে মাঝে নিজে নিজেই যাচাই করি, ফরমাল ল্যাঙ্গুয়েজে যাকে বলে সেলফ ইভ্যালুয়েশান, তাহলে অনেক সময়েই আমরা বুঝতে পারবো যে আমাদের মধ্যে ডায়বেটিসের কোন পূর্বলক্ষন দেখা দিচ্ছে কিনা। এমন কিছু দেখা দিলে সেক্ষেত্রে আমাদের গ্রুপ-পেইজ-চ্যানেলে যারা এক্টিভ, তাদের জন্য সুযোগ থাকবে গ্রুপে-চ্যানেলে থাকা গাইডলাইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে ডায়বেটিসের ঝুকি কমিয়ে ফেলার।
তাহলে এক নজরে দেখে নিন ডায়বেটিসের প্রধান কিছু পূর্বলক্ষণ। খেয়াল রাখতে হবে, পূর্বলক্ষন মানেই ডায়বেটিস হয়ে যাওয়া নয়, বরঞ্চ আপনি ডায়বেটিসের ঝুকিতে আছেন কিনা তা বোঝার উপায় এটা। মাঝে মাঝে এই পূর্বলক্ষনের ভিত্তিতেই ডাক্তাররা রোগ নির্নয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন।
১) খাওয়ার পর হাত পা কাপা, চোখ ঝাপসা হয়ে আসা
২) রাতের বেলা বারবার প্রস্রাব করতে উঠতে বাধ্য হওয়া
৩) চেষ্টা করা সত্ত্বেও রাতে ঘুমাতে না পারা এবং এলার্ম ছাড়া বেলা ৮টা ৩০ বাজার পরেও নিয়মিতই ঘুম থেকে উঠতে না পারা(বিশেষভাবে পুরুষদের জন্য সকালে উঠতে না পারাটা একটা বিপদ সংকেত)
৪) বার বার পানি পান করার পরেও সারাদিন তৃষ্ণা লাগতে থাকা
৫) কম খাওয়া সত্ত্বেও ওজন না কমা অথবা খাওয়া দাওয়া করার পরেও দ্রুত ওজন কমতে থাকা
৬) সারাক্ষন ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা
৭) শরীরের কোথাও কোন ক্ষত হলে তা সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগা
৮) পুরুষদের জন্য, উচ্চ রক্তচাপ এবং দিনে ২ বারের বেশি লিঙ্গোত্থান না হওয়া অথবা লিঙ্গোত্থানে ব্যর্থতা
৯) নারীদের জন্য, অনিয়মিত মাসিক অথবা চেষ্টাসত্ত্বেও গর্ভধারনে ব্যর্থতা
১০) ভিটামিন ডি লেভেল মেয়েদের ১৫ এর নিচে এবং পুরুষদের ২৫ এর নিচে থাকা
১১) হাতে পায়ে মাসলস না থাকা বরঞ্চ শরীরের বেশিরভাগ ওজন পেটের দিকে থাকা
১২) ওজন কমানোর চেষ্টা করলে হাত পা শুকিয়ে যাওয়া কিন্তু পেট না কমা
এই পূর্বলক্ষনগুলির মধ্যে অন্তত ২টা যদি কারো থাকে, তার উচিত নিজের HbA1C টেস্ট করিয়ে ফেলা। HbA1C ৫.৭ এর ওপরে থাকলে টানা তিন থেকে চার মাস ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এবং এসময় প্যালিও/লো কার্ব ডায়েট করা। এসংক্রান্ত ভিডিও লিংক কমেন্টে দিচ্ছি।
এখানে থাকা পূর্বলক্ষনগুলোর মধ্যে কারো যদি ৩টার বেশি কমন পড়ে, তার উচিত একজন ডাক্তার বা ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের শরনাপন্ন হয়ে চিকিৎসা ও লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট নেয়া। ৩টার বেশি পূর্বলক্ষন থাকা মানে খুব সম্ভবত হাই কোলেস্টেরল/ফ্যাটি লিভার/পিসিওএসের সমস্যা থেকে থাকতে পারে এবং সাথে শক্তিশালী ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও রয়েছে।
আমি সবার বোঝার সুবিধার্থে ডায়বেটিস সিরিজটা আবার শুরু করতে যাচ্ছি ইনশা আল্লাহ। সবাই দোয়া রাখবেন যেন টানা ব্যস্ততার ফাকে ফাকে সিরিজটা ভালভাবে লিখে ফেলতে পারি।